‘নো -এন্ট্রি’ জ়োনে চালকের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার আরামবাগের ২২ মাইলে। নিজস্ব চিত্র ।
পঞ্চায়েত এলাকার টোটো-অটো শহরের মূল রাস্তায় ঢুকতে পারবে না বলে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল মাস কয়েক আগেই। তারপরেও আরামবাগ শহরের ভিতর যানজট সমস্যা কাটছিল না। ক্ষোভ-অভিযোগে সরব ছিলেন ভুক্তভোগীরা। এ বার যানজট রুখতে অন্তত দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পণ্যবাহী ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ করল জেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার থেকে ওই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসডিপিও(আরামবাগ) সুপ্রকাশ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “শহরের ভিতরে গৌড়হাটি মোড় থেকে পল্লিশ্রী, প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তায় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পণ্যবাহী লরি, ট্রাক ইত্যাদি ভারী যান চলাচল করতে পারবে না।”
পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দেড় কিলোমিটারে যাত্রিবাহী গাড়ির গতি মসৃণ রাখতে শহরে ঢোকার মুখে পাঁচ জায়গায় (জয়রামপুর, গির্জাতলা, কালীপুর রেলগেট, দৌলতপুর ও কামারপুকুর) ‘নো-এন্ট্রি’ বোর্ড দিয়ে নজরদারি চলছে। ওই সব ‘পয়েন্ট’ দিয়েই শহরে ট্রাক ঢোকে।
কিন্তু কত দিনের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা? জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক(আরটিও) দেবাশিস রায় বলেন, “এখন আপাতত এই নির্দেশ বলবৎ থাকবে। সময়ে সময়ে পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
এই ‘নো-এন্ট্রি’র বিরোধীতা না করলেও সময়সীমা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন মহকুমার চালকল-মালিকেরা। হুগলি জেলায় চালু চালকলের সংখ্যা প্রায় ১১৮টি। তার মধ্যে আরামবাগ মহকুমাতেই রয়েছে ৯৯টি। মহকুমার অধিকাংশ চালকল গণবন্টনের জন্য বছরভর সরকারের কাছে চাল সরবরাহ করে। মহকুমা চালকল-মালিক সংগঠনের সভাপতি সুনীলকুমার ঘোষ বলেন, “শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল ঠিকই, কিন্তু দু’বেলা চার ঘণ্টা করে ‘নো-এন্ট্রি’ না করে দেড়-দু’ঘণ্টা করা হোক।” তিনি আরও জানান, বিষয়টি বিবেচনার জন্য চালকলগুলির তরফে দাবি জানানো হবে। বিশেষ করে গণবন্ঠনের জন্য সরকারকে দু’মাসের মধ্যে চাল দেওয়ার সময়সীমা আছে। অন্তত গণবন্টনের চাল পাঠানোর ক্ষেত্রে গাড়িগুলিকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের আওতায় আনার দাবি জানানো হবে।
কলকাতার পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের অনেকগুলি জেলার যোগাযোগের মাধ্যম শহরের ভিতরে থাকা ওই দেড় কিলোমিটার রাস্তা। প্রতিদিন কয়েক হাজার গাড়ি চলে। ফলে, আরামবাগ শহরের ক্ষেত্রে এই ‘নো-এন্ট্রি’ ব্যবস্থা স্থায়ী সমাধান নয় বলেই অনেকে অনেকে মনে করছেন। তাঁদের দাবি, আগেও একাধিক বার বিক্ষিপ্ত ভাবে (কালীপুর সেতু সংস্কারের সময়ে বা আলুর মরসুমে)এই ব্যবস্থা হলেও শহরে যানজট থেকেই গিয়েছে। অভিযোগ, রাস্তা দখল করে ব্যবসা, ইমারতি দ্রব্য রাখা, বেআইনি ভাবে গাড়ি পার্ক করা নিয়ে পুরসভা এবং পুলিশের সক্রিয়তা না থাকাতেই শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। প্রশাসনিক উদাসীনতার অভিযোগ তুলে শহরের ব্যবসায়ী মহল এবং বিভিন্ন নাগরিক মঞ্চের তরফে কয়েকবার বিক্ষোভ, পথ অবরোধও হয়েছে। কিন্তু অবস্থার বদল হয়নি। বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন ১৪ মিটার চওড়া রাস্তাটির প্রায় ৫ মিটার হকারদের দখলে রয়েই গিয়েছে। যদিও উদাসীনতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুরসভা ও পুলিশ প্রশাসন। রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।