অসচেতন: রাজ্যে প্রতিদিন বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। দূরত্ব-বিধি মেনে চলা, মাস্ক পরায় বারবার জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। অথচ, গুপ্তিপাড়ায় ‘ভান্ডার লুট’ উৎসবে উড়ে গেল সেই নিয়ম। ছবি ও তথ্য: সুশান্ত সরকার
আজ, উল্টোরথ। ভক্তেরা মাসির বাড়ি থেকে রথে চাপিয়ে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার বিগ্রহ নিয়ে যাবেন জগন্নাথ মন্দিরে। উৎসবকে কেন্দ্র করে শ্রীরামপুরের মাহেশ এবং বলাগড় ব্লকের গুপ্তিপাড়ায় দর্শনার্থীর ঢল নামবে বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসনের দাবি, সুষ্ঠু ভাবে যাতে উৎসব পালিত হয়, সে জন্য সব ব্যবস্থা সারা। তবে, করোনা যে হারে বাড়ছে, তাতে দর্শনার্থীরা সোজারথের মতোই স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে উদাসীন থাকলে ওই ভাইরাস আরও ছড়াবে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।
মাহেশের জগন্নাথ মন্দির সূত্রের খবর, এখানে রথটান শুরু হবে বিকেল সাড়ে তিনটেয়। রথে তিন দেবতার বিগ্রহ তোলা শুরু হবে বেলা সওয়া ২টো থেকে। শুক্রবার, উল্টোরথের আগের দিন মেলায় ভালই ভিড় হয়েছিল। কিন্তু মাস্ক পরার সচেতনতা কার্যত উধাও। প্রশাসন সূত্রে খবর, উল্টোরথে দর্শনার্থীদের মধ্যে মাস্ক বিলি করা হবে। সবাই যাতে যথাযথ ভাবে মাস্ক পরে উৎসব পালন করেন, তা নিয়ে প্রচার করা হবে।
এ দিন মাহেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারক করেন চন্দননগরের নতুন পুলিশ কমিশনার অমিত জাভালগি। চন্দননগর কমিশনারেট সূত্রে খবর, সুষ্ঠু ভাবে রথটান সম্পন্ন করতে এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হবে। মহিলা পুলিশকর্মীও থাকবেন। রাস্তার পাশাপাশি আশপাশের আবাসনের ছাদ থেকে পুলিশের নজরদারি চলবে। ড্রোনের নজরদারিও থাকবে। পুলিশ আধিকারিকরা জানান, বাড়ি বা আবাসনের ছাদে বাসিন্দা বাদে বাইরের লোকজন উঠতে দেওয়া হবে না। মাসির বাড়ি থেকে জিটি রোড ধরে রথ যাবে জগন্নাথ মন্দিরে। তাই, সকাল থেকেই জিটি রোডে যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
প্রথা অনুযায়ী শুক্রবার, অর্থাৎ উল্টোরথের আগের দিন ‘ভান্ডার লুট’ হল গুপ্তিপাড়ায়। রথ কমিটির সঙ্গে যুক্ত লোকজন জানান, এখানে বৃন্দাবনচন্দ্র জিউ মন্দির থেকে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা সোজারথের দিন মাসির বাড়িতে চলে আসেন। ভক্তদের বিশ্বাস, উল্টোরথের আগের দিন একদল লুটেরা তাঁদের খাবার লুট করে পালিয়ে যায়। বাধ্য হয়ে পরের দিন দেবতারা বৃন্দাবনচন্দ্র জিউ মন্দিরে ফিরে যান।
এ দিন পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তায় ওই প্রথা পালিত হয়। দেখতে কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। যদিও, করোনা সচেতনতার বালাই ছিল না বললেই চলে। রথ কমিটির তরফে মাস্ক পরা নিয়ে প্রচার করা হলেও বেপরোয়া দর্শনার্থীরা তা কানে তোলেননি।
প্রশাসন সূত্রে খবর, এখানে রথটান শুরু হবে বেলা ১২টা নাগাদ। হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হবে। সাদা পোশাকে পুলিশকর্মীরা টহল দেবেন। থাকবে সিসি ক্যামেরার নজরদারি। রথ কমিটির কর্মকর্তা তথা গুপ্তিপাড়া-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিশ্বজিৎ নাগ বলেন, ‘‘গুপ্তিপাড়ায় রথ দেখতে গঙ্গার ও পাড়ে নদিয়া থেকে বহু মানুষ আসেন। তাই, উল্টোরথের সকাল থেকে গঙ্গায় অতিরিক্ত লঞ্চ চলবে। করোনা পরিস্থিতির জন্য মাস্ক বিলি করা হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে মাইকে প্রচারও করা হবে।’’