কেশর মালাই ও আম্রলিপি। নিজস্ব চিত্র
মিষ্টত্ব কম, ভাইফোঁটার জন্য এমন মিষ্টির খোঁজ চলছে দোকানে দোকানে। চিরাচরিত মিষ্টির পাশাপাশি দোকানের শো-কেসের অনেকটা জায়গা দখল করছে রীতিমতো মাথা খাটিয়ে তৈরি করা হরেক মিষ্টি। যেমন নাম, তেমন দেখতে। ভাইফোটার একদিন আগে, মঙ্গলবার হুগলি জেলার বিভিন্ন দোকানে দেখা গেল নতুন ধরনের ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করতে ব্যবসায়ীরা চেষ্টার কসুর করছেন না।
জলভরা সন্দেশের জন্য বিখ্যাত চন্দননগরের সূর্য্য মোদক। বর্তমান কর্ণধার শৈবাল মোদক জানান, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জলভরায় বৈচিত্র এসেছে। আম, চকলেট প্রভৃতি নানা স্বাদের জলভরায় শো-কেস সাজছে। তাঁর কথায়, ‘‘এখন কড়া পাকের মিষ্টি কেউ খেতে চাইছেন না। আমাদের জলভরা কড়া আর নরম পাকের মাঝামাঝি বলতে পারেন।’’ এ ছাড়াও, কেশর মালাই, রাজনন্দিনী, অমৃত পাতুরি, মধু মোদক প্রভৃতি নয়া জমানার মিষ্টি লোকে পছন্দ করছেন।
শৈবাল জানান, কেশর মালাইয়ের ক্ষেত্রে ভিতরে জাফরান দেওয়া রাজভোগের উপরে দুধের ক্রিম, কাজু, কিশমিশ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ৮ রকম মিষ্টিকে কলাপাতায় মুড়ে ঘিয়ে ভিজে তৈরি হচ্ছে অমৃত পাতুরি। ভাইফোঁটা ছাপ সন্দেশ, বেকড্ রসগোল্লা, বেকড্ রসমাধুরীরও বাজার রয়েছে। এ সবের আগমনে সনাতনী চিত্রকূট, ক্ষীরমোহন, বেনারসি চমচম কিছুটা ব্যাকফুটে।
রিষড়ার ফেলু মোদকে পুরনোর পাশাপাশি নতুন জমানার মিষ্টির দেখা মেলে। এ বার এখানে ভাইফোঁটা স্পেশাল— আম্রলিপি এবং মিহিদানা-সন্দেশ। নরম পাকের সন্দেশের মধ্যে আম ও আমসত্ত্বের প্রলেপ দিয়ে তৈরি হচ্ছে আম্রলিপি। তাতে বাদাম, এলাচগুঁড়ো, কাজু, পেস্তার উপস্থিতিও থাকছে। সন্দেশ আর মিহিদানার যুগলবন্দিতে তৈরি মিহিদানা-সন্দেশ। দোকানের কর্ণধার অমিতাভ দে জানান, দু’টিই ‘কম মিষ্টি’র মিষ্টি। গুড়, স্ট্রবেরি, চকলেটের পদও রয়েছে। চিরন্তন সাদা রসগোল্লার পাশাপাশি হরেক রং ও স্বাদের রসগোল্লা যোগ দিয়েছে।
অমিতাভর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য সচেতনতার পাশাপাশি অনেকে সুগারের সমস্যায় ভোগেন। তাঁরা অল্প মিষ্টির সন্দেশ বা রসের মিষ্টি পছন্দ করেন।’’ নোনতার মধ্যে ফুলকপি দেওয়া সিঙারা, গুটকে কচুরি, নিমকির চাহিদাও ভালই।
চুঁচুড়ার সরকার সুইটসেও পুরনোর পাশাপাশি ফিউশন মিষ্টির সমতা বজায় রাখা হচ্ছে। নতুনের মধ্যে সন্দেশ ঘিয়ে ভেজে ড্রাই ফ্রুট দিয়ে ‘মালাই কোটা সন্দেশ’ ভাইয়ের পাতে দেওয়ার জন্য বোনেরা খোঁজ করছেন। থাকছে ছানার পাতুরি, আম, চকলেট, গুড়ের জলভরা সন্দেশ, ক্রিমের মিষ্টিও। দোকানি নন্দন সরকার বলেন, ‘‘যত দিন যাচ্ছে, স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য কড়া মিষ্টির দিকে কমই যাচ্ছেন মানুষ। তাই, মিষ্টিতে মিষ্টত্বের ভাগ যতটা কম করা যায়, সেই চেষ্টাই করতে হচ্ছে। তবে, বিশেষত পুরনো মানুষদের কথা ভেবে ট্র্যাডিশনাল মিষ্টি অবশ্যই বানাতে হয়। খাজা, গজা, লবঙ্গলতিকা থেকে রসগোল্লা, পান্তুয়া, কালোজামে আজও মানুষ আকৃষ্ট।’’
চিরাচরিত অনেক পদ বজায় রেখেও কম মিষ্টির পদের বৈচিত্র বহু দোকানেই।