শিয়াখালা বাজারের চৌমাথা মোড়ে অবরোধ। ছবি: দীপঙ্কর দে
এ বার আলুর ফলন যেমন কম, তেমনই দাম মিলছে না বলে চাষিদের হাহাকার শোনা যাচ্ছে সর্বত্র। তাঁদের লোকসান কমাতে সরকার কুইন্টালপ্রতি ৬৫০ টাকা সহায়ক মূল্য ধার্য করেছে। কিন্তু তাতে খুশি নন বহু চাষি। সেই দাম কুইন্টালপ্রতি এক হাজার টাকা করার দাবিতে শনিবার পথে নামল কৃষকসভা। জাতীয় এবং রাজ্য সড়ক অবরোধ করা হয়।
রাজ্যের অন্যতম আলু উৎপাদক জেলা হুগলি। এ দিন বিকেলে পান্ডুয়ার জিটি রোড, আরামবাগের কাবলে, গোঘাটের কামারপুকুর চটি, খানাকুলের রামনগর, পুরশুড়ার সামন্ত রোড-সহ জেলার মোট ১৮টি জায়গায় গড়ে আধ ঘণ্টা করে বিক্ষোভ অবস্থান করে কৃষকসভা। হাওড়ার আমতার জয়পুরের সেহাগড়িতেও রাস্তায় আলু ছড়িয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
হুগলি জেলা কৃষকসভার নেতা ভাস্কর রায় জানান, আলুর সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি ছাড়াও তাঁরা চান, হিমঘরে আলু সংরক্ষণে চাষিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। ভিন রাজ্যে এবং বিদেশে আলু রফতানিতে সরকার উদ্যোগী হোক। আরএসপি-র দাবি ওই দর ১১০০ টাকা করা হোক। ওই দলের জেলা সম্পাদক মৃন্ময় সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘চাষির অবস্থা করুণ। অথচ, আড়তদার, হিমঘর মালিকদের নিয়ন্ত্রণে আলু নিয়ে ফাটকা কারবার চলছে। স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ মেনে খরচের দেড় গুণ দাম দিয়ে মাঠে গিয়ে চাষির থেকে সরাসরি আলু কিনুক সরকার।’’ বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসক দীপাপ্রিয়া পি’কে চিঠিও দিয়েছে আরএসপি।
এ দিন মাঠ থেকে চাষিরা ৩৮০-৩৯০ টাকায় বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) আলু বিক্রি করেছেন। পুরশুড়ার কেলেপাড়ার চাষি বাপ্পাদিত্য ধোলের খেদ, “১৪ বিঘা জমিতে জ্যোতি আলুর চাষ করেছিলাম। ফলন হয়েছে বিঘায় গড়ে ৭০ বস্তা। এ দিন দাম পেলাম ৩৮০ টাকা বস্তা। সরকারি দরের চেয়ে বেশি পেয়েও বিঘায় প্রায় হাজার টাকার উপর লোকসান হচ্ছে।” একই অভিযোগ করেছেন আরামবাগের তিরোলের চাষি সবুজ আলি, তারকেশ্বরের শঙ্কর কুণ্ডু প্রমুখ।
চাষিদের হিসাবে বিঘায় ফলন হওয়ার কথা ন্যূনতম ১০০ বস্তা। বীজ, সার, সেচ ইত্যাদি সব মিলিয়ে আলু চাষে বিঘায় প্রায় ২৭ হাজার টাকার উপরে খরচ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বস্তাপিছু অন্তত ৪৫০ টাকা পেলেও কিছুটা লাভ থাকত।
জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানান, ফলন কম হয়েছে বলে অভিযোগ আসছে। সঠিক হিসাব পেতে সরেজমিনে খতিয়ে দেখা (ক্রপ কাটিং) শুরু হয়েছে। সরকারি সহায়ক মূল্যের নীচে আলু কেনাবেচা হলে পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি বিপণন দফতরের সহ-অধিকর্তা সুজিত ভদ্র।