Uttarakhand Disaster

Uttarakhand disaster: দেখি ধসে রাস্তা ভেঙে দোতলা বাড়ির ছাদে

উত্তরপাড়া পুরসভার কয়েকজন কর্মীও পরিবার নিয়ে উত্তরবঙ্গে বেড়াতে গিয়ে রিশপে আটকে পড়েছিলেন। ২২ জনের ওই দলে সাতটি শিশুও রয়েছে।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৩২
Share:

লাভা থেকে গরুবাথান যাওয়ার পথে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র।

দশমীর রাতে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই উত্তরবঙ্গ রওনা হয়েছিলাম। সঙ্গী পাঁচটি পরিবারের ১৭ জন। কনিষ্ঠটির বয়স মেরেকেটে আট। কালিম্পংয়ের চারখোলে পৌঁছই শনিবার। সে দিনই চক্কর কাটতে বেরিয়ে বৃষ্টির তাড়ায় রণে ভঙ্গ দিতে হয়। রাতেই প্রবল ঝড়বৃষ্টি ভয়ের কাঁপন বাড়াল। পরের দিন গন্তব্য ছিল লোলোগাঁও। কিন্তু ধসে রাস্তা বন্ধ থাকায় গেলাম লাভা। ঝড়ে রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়ায় সেখানেও যেতে হল ঘুরপথে। আলগাড়া হয়ে।

Advertisement

পথে অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে গাড়ির ছাদে বাঁধা ব্যাগ, সুটকেসে রাখা পোশাকআশাক ভিজে জবজবে হয়ে গিয়েছিল। রুম-হিটার ভাড়া করে রাতভর জামাকাপড় শুকোতে হল। পরের দিন রিশপ। সেখানে দিনভর বৃষ্টি। সঙ্গে টানা লোডশেডিং। মোবাইলের চার্জ শেষ। বাড়িতে খবর দেওয়া পর্যন্ত গেল না। টানা তিন দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে রিশপের সুন্দর রূপ তখন ভয়ঙ্কর। কিছু পর্যটক রাস্তায় আটক পড়েছেন শুনে হোটেল মালিক বিমল গুরুং উদ্ধারে গেলেন। রাত ৯টায় নিভে গেল ইমার্জেন্সি আলো। চতুর্দিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সারারাত বৃষ্টি থামেনি। খবর পেলাম, অন্তত এক হাজার গাড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে। আতঙ্কে বিস্কুট, জলের বোতল বেশি করে কিনছেন সবাই।

বুধবার দুপুরের পরে বৃষ্টি খানিক কমে। কিন্তু রাস্তা বন্ধ। বুধবার রাতেই আমাদের ফেরার ট্রেন। কালিম্পং থানার পরিচিত এক পুলিশ অফিসার বললেন, ‘‘ফেরার কথা ভুলে যান। হোটেলে বসে থাকুন।’’ খবর এল, বিকেলে মেঘভাঙা বৃষ্টির সম্ভাবনা। সারাদিনে রাস্তা চালুর খবর এল না। বাধ্য হয়ে হোটেলেই বসে থাকতে হল। ফলে, ট্রেন ধরা গেল না।

Advertisement

বৃহস্পতিবার লাভা, আলগাড়া, গরুবাথান হয়ে ফেরার সময় বৃষ্টি আর ধসের তাণ্ডবের ছাপ দেখলাম। পাইন গাছ রাস্তায় আছড়ে পড়েছে ধসে। পূর্ত দফতরের কর্মীরা কোনওক্রমে সেই গাছের মাঝের অংশ কেটে গাড়ি চলার পথ করে দিয়েছেন। গরুবাথানের খানিক আগে দেখলাম, ধসে রাস্তা ভেঙে লাগোয়া দোতলা বাড়ির ছাদে আছড়ে পড়েছে। এই সব সাক্ষী করে শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছলাম সন্ধ্যায়। সরকারি বাসে কলকাতা রওনা হলাম। কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য দেখা এ বার হল না। পিছনে পড়ে রইল বৃষ্টি আর ধসের টাটকা স্মৃতি।

উত্তরপাড়া পুরসভার কয়েকজন কর্মীও পরিবার নিয়ে উত্তরবঙ্গে বেড়াতে গিয়ে রিশপে আটকে পড়েছিলেন। ২২ জনের ওই দলে সাতটি শিশুও রয়েছে। প্রশাসনের সাহায্যে বুধবার রাতে তাঁরা লাটাগুড়িতে নামতে পারেন। পথেই তাঁরা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হন। রাস্তায় ধস নামে। গাড়ি আটকে যায়। চালক ফোনে গাড়ির মালিককে খবর দেন। এর পরে মোবাইলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অনেক চেষ্টার পরে উত্তরপাড়ায় খবর পায় পর্যটকদের পরিবার। বিষয়টি জেনে উত্তরপাড়ার পুরপ্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান দিলীপ যাদবের উদ্যোগে কালিম্পং জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে হুগলি জেলা প্রশাসন। শেষে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে উত্তরপাড়া পুরসভার কর্মী সঞ্জিৎ দাসের প্রতিক্রিয়া, ‘‘যেন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরলাম!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement