দূষণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা
coal

গ্যাস সরিয়ে গুলে ফিরেছে সারেঙ্গা

গ্রামবাসীদের অনেকের দাবি, গুলে রান্না হওয়ায় মাসে তাঁদের সাশ্রয় হচ্ছে তিন-চারশো টাকা। কোনও কোনও মাসে সাশ্রয়ের পরিমাণ আরও কিছুটা বাড়ছে।

Advertisement

অরিন্দম বসু

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:৩৯
Share:
A Photograph of a person using coal for cooking

সারেঙ্গার একটি কারখানায় গুল শুকোনো হচ্ছে । নিজস্ব চিত্র।

রান্নার গ্যাসের দাম কমার নাম নেই। তাই গ্যাস ছেড়ে উনুনে ফিরেছেন সাঁকরাইলের সারেঙ্গা গ্রামের অনেক মহিলা। এতে সাশ্রয় হচ্ছে বলে তাঁদের দাবি। এই সুযোগে ঝাঁপ খুলে ফেলেছে দু’টি গুল কারখানাও। কিন্তু এতে অশনিসঙ্কেত দেখছেন পরিবেশবিদরা। তাঁদের দাবি,দূষণহীন যে পরিবেশের স্বার্থেগ্যাসের ব্যবহার শুরু হয়েছিল, সেটা বিফলে যাচ্ছে।

Advertisement

ওই এলাকায় নিম্নবিত্ত এবং গরিব মানুষের বাস। কেউ জরি কারখানায় কাজ করেন, কেউ জুট মিলে। কারও কারও পেশা দিনমজুরি। বহু বছর আগে তাঁরা রান্নার গ্যাসের গ্রাহক হয়েছিলেন। তখন দাম ৫০০-৬০০ টাকা ছিল। এখন বেড়ে একটি সিলিন্ডারের দাম হয়েছে প্রায় ১১০০ টাকা। নিম্নবিত্ত ওই পরিবারগুলির একাংশের দাবি, অত টাকা দিয়ে তারা গ্যাস কিনতে সমর্থ নয়। কয়েকশো গ্রামবাসী তাই গুলকেই বিকল্প জ্বালানি হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বহু বছর আগে তাঁরা গুল বা কয়লাতেই রান্না করতেন।

গ্রামবাসীদের অনেকের দাবি, গুলে রান্না হওয়ায় মাসে তাঁদের সাশ্রয় হচ্ছে তিন-চারশো টাকা। কোনও কোনও মাসে সাশ্রয়ের পরিমাণ আরও কিছুটা বাড়ছে। আর এই সুযোগে ফের আয়ের মুখ দেখছে এলাকারদু’টি গুল কারখানা। বহুদিন বন্ধথাকার পরে কয়েক মাস আগে সেগুলি ঝাঁপ খুলেছে।

Advertisement

পবন যাদব নামে এক প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘অভাবের সংসারে প্রথম দিকে খাবার পরিমাণ কমিয়েও গ্যাস কিনেছি। কিন্তু যে ভাবে দাম বাড়তে লাগল, তাতে আর ওটা কিনতে পারছি না। তাই আবার আগের মতো গুলকেই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছি।’’ শেখ নাজিম নামে আর এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘একটা গ্যাস সিলিন্ডার এক মাস চলে। মাসে ১১০০ টাকা খরচ। সেখানে পাঁচ-ছ’শো টাকার গুল দিয়ে সারা মাসের রান্না হয়ে যায়। টাকা বাঁচানোর জন্যই আর গ্যাস ব্যবহার করি না।’’ মিনতি দাস নামে এক মহিলার কথায়, ‘‘গ্যাসে কম সময়ে রান্না হয়, এটা ঠিক।গ্যাসে শুধু ভাতটা করি। বাকি রান্না উনুনে। ছ’মাসে একবার গ্যাস তুললেই হয়ে যায়।’’

কারখানা খুলতে পেরে খুশি গুল-কারবারিরা। কেডিটি পোল এলাকার একটি গুল কারখানার মালিক তারকনাথ নস্কর বলেন, ‘‘১৯৯৩ সালে মাসে ১২০ টন গুল বিক্রি করতাম। ২০০০ সাল নাগাদ বিক্রি কমে দাঁড়ায় মাসে ৬০ টনে। আর তারপর তো গ্যাসের রমরমায় দোকানই বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। এখন মাসে চার টনের মতো গুল বিকোচ্ছে। সেটাই লাভ।’’ তবে তিনি জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গুলের দামও বেড়েছে। আগে গুলের কিলোপ্রতি দাম ছিল ৪০-৪৫ টাকা। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ টাকায়।

গুলে রান্নার প্রবণতায় বিপদ দেখছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। তাঁর কথায়, ‘‘রান্নার গ্যাসের তুলনায় গুলে দূষণের মাত্রা মানুষের সহ্যক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি। এর ফলে ওই এলাকার বাতাস দূষিত হচ্ছে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের সুবিধা-অসুবিধা প্রশাসনের দেখা উচিত। গুল কারখানাগুলির উপরে দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের নজরদারির অভাব রয়েছে। কারখানাগুলির বৈধ ছাড়পত্র খতিয়ে দেখা দরকার।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement