প্রতীকী ছবি।
রেফার করা এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে উত্তেজনা ছড়াল হাওড়া জেলা হাসপাতালে। অভিযোগ, ওই ব্যক্তির আত্মীয়েরা মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে কর্তব্যরত তিন চিকিৎসককে মারধর করেন। ওই ঘটনায় গুরুতর আহত এক চিকিৎসককে সেখানেই ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর কাঁধের হাড় সরে গিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। বাকি দু’জনের আঘাত তত গুরুতর নয়। অভিযোগের ভিত্তিতে রাতেই মৃতের ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতের নাম রোহিত দে।
হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বেলুড় স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে শ্বাসকষ্ট-সহ কিডনির গুরুতর সমস্যা নিয়ে কার্তিক দে (৪৫) নামে ওই রোগী বৃহস্পতিবার রেফার হয়ে আসেন হাওড়া জেলা হাসপাতালে। লিলুয়ার পটুয়াপাড়ার বাসিন্দা তিনি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল জানান, রোগীর অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে ডায়ালিসিস করাও সম্ভব হয়নি। তা-ও সব চেষ্টা করা হয়। চিকিৎসকেরা তাঁর পরিবারকে বার বার সব জানিয়েও ছিলেন। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে রোগীর অবস্থার আরও অবনতি হয়। রক্তচাপ কমে যায়। রাত সাড়ে ১০টায় রোগী মারা যান। এর পরেই চিকিৎসকদের মারধর করা হয়। যেটা দুর্ভাগ্যজনক।’’
পুলিশ জানিয়েছে, ডাক্তারদের মারধর, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর-সহ মোট ছ’টি অভিযোগে মৃতের ছেলে রোহিতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মারধরের জেরে নবারুণ মজুমদার নামে কর্তব্যরত চিকিৎসকের ডান কাঁধের হাড় সরে গিয়েছে। তিনি হাসপাতালেই ভর্তি। প্রমিত বসু নামে এক চিকিৎসককে লক্ষ্য করে ইসিজি যন্ত্র ছোড়া হলে মাথায় আঘাত লাগে।
রোহিতের গ্রেফতারির পরে রবিবার সকালে পটুয়াপাড়ার লোকজন নিয়ে মৃতের স্ত্রী রেখা দে হাসপাতালে হাজির হন। তাঁরা পুলিশকে ঘিরে তর্কাতর্কি শুরু করেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, রোহিতকে না ছাড়া হলে তাঁরা দেহ নেবেন না। পরে সদলবলে হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান। এই নিয়ে ফের উত্তেজনা ছড়ায়। পরে আরও পুলিশ বাহিনী হাসপাতালে মোতায়েন করা হয়। রেখার দাবি, ‘‘স্বামীর যখন প্রায় শেষ অবস্থা, তখন ছেলে ডাক্তারদের ডাকতে গেলে রীতিমতো তাড়িয়ে দেওয়া হয়। মারা যাওয়ার পরে যখন ডাক্তারদের কাছে ছেলে প্রতিবাদ জানাতে যায়, তখন ওর সঙ্গেই তর্কাতর্কি, ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।’’
রবিবার আক্রান্ত চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করতে যান পাঁচটি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের প্রতিনিধিরা। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনাও করেন তাঁরা। মঞ্চের তরফে মানস গুমটা ও কৌশিক চাকী বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ত্রুটি ঢাকতে চিকিৎসকদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এ জন্যই তাঁরা বার বার আক্রান্ত হচ্ছেন, এই ঘটনা সেটাই প্রমাণ করছে। শেষ পর্যন্ত কী হয়, আমরা দেখব।’’
হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা যে আক্রান্ত হয়েছেন, তা মেডিক্যাল রিপোর্টেই প্রমাণিত। তদন্ত হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও অভিযুক্তদের ধরা হবে।’’