হাওড়া থেকে টিকিয়াপাড়ার মাঝে ভেসে গিয়েছে লাইন। আটকে পড়েছে বহু ট্রেন। সেই জল ঠেলেই এগোচ্ছেন যাত্রীরা। শুক্রবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
কোথাও জমা জল ঘরে ঢুকে ডুবে গিয়েছে পাম্প। ফলে হাওড়া জুড়ে শুরু হয়েছে পানীয় জলের সঙ্কট। কোথাও চার চাকা গাড়ির অর্ধেক ডোবা। রাস্তাঘাট, অলিগলিতে হাঁটু সমান বা কোমর পর্যন্ত জল জমে আছে। বেলুড় স্টেশন রোডের ভূগর্ভস্থ পথে নেমেছে নৌকা। শুক্রবার সকালে জমা জলের কারণে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। তবুও গোটা দিনে হাওড়া পুরসভার নিকাশি কর্মীদের পথে নেমে কাজ করতে দেখা গেল না! এমনই অভিযোগ তুলছেন শহরের বাসিন্দাদের বড় অংশ। হাওড়ার পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সনের অবশ্য দাবি, কর্মীরা পথে নেমেই কাজ করছেন।
বুধবার থেকে মাঝারি, ভারী এবং অতিভারী বৃষ্টির দাপট বুঝিয়ে দিল, নিকাশি সংস্কারে হাওড়া পুরসভা ঠিক কতটা ব্যর্থ। যে কারণে জমা জলে চলে গেল দু’টি প্রাণ। জলবন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেতে কত ঘণ্টা লাগবে, তার নিশ্চয়তাও দিতে পারলেন না পুর কর্তৃপক্ষ। জল বার করতে পুরসভা ৪০টি পাম্প বসিয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, হাওড়ায় দিনে ৩০-৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক। কিন্তু শুধু বৃহস্পতিবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৪৫ মিলিমিটার! ফলে আগেই ভরে থাকা নিকাশি নালাগুলি হাওড়ার উত্তর থেকে দক্ষিণের জমা জল বার করতে পারেনি। এ দিনের দু’টি মৃত্যুর প্রথমটি ঘটে দাশনগর স্টেশনের পাশে বালিগোলা বস্তিতে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘরের জমা জলে দাঁড়িয়ে মেন সুইচ অফ করতে গিয়েছিলেন হেমন্ত সিংহ নামে এক যুবক। মেন সুইচে হাত দিতেই তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয়। অন্য দিকে, এ দিন ডক্টর বনমালী ঘোষ লেনের বাসিন্দা অলোক ঘোষ নামে এক যুবক কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য সাইকেলে বেরিয়েছিলেন। বটানিক্যাল গার্ডেন থানা এলাকার পুরনো নবনারীতলার কাছে রাস্তা আর পাশের ডিভিসি পুকুর তখন একাকার। পুলিশ জানায়, যুবক বুঝতে না পেরে পুকুরে পড়ে তলিয়ে যান। স্থানীয়েরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পুরসভা সূত্রের খবর, উত্তর হাওড়ার পাশাপাশি জল জমে আছে মধ্য হাওড়ার পঞ্চাননতলা, বেলিলিয়াস রোড, বেলিলিয়াস লেন, টিকিয়াপাড়া, বেলগাছিয়া, রামরাজাতলায়। জলের নীচে লিলুয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ভট্টনগর, বেলগাছিয়া ভাগাড়, লিলুয়া থানার সামনের রাস্তায় বৃহস্পতিবার থেকেই জল জমেছিল। রাতের বৃষ্টিতে আরও বেড়ে যায়। শোচনীয় অবস্থা বালির সাঁপুইপাড়া, পাঠকপাড়া এলাকার। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের পঞ্চাননতলা রোড সংলগ্ন হৃদয়কৃষ্ণ ব্যনার্জি লেনে বাড়ির ভিতরে জল ঢুকে পাম্প ডুবে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দেয়।
৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের দু’টি সরকারি আবাসনের নীচে অনেকটাই জল দাঁড়িয়ে যায়। ডুবে যায় চার চাকা গাড়ির অর্ধেক। ড্রেনেজ ক্যানাল রোডে জমা জল পেরোতে গিয়ে গাড়ি বন্ধ হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন অনেকে। বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সারা দিন পুরসভার নিকাশি দফতরের কোনও কর্মীর দেখা মেলেনি। এমনকি ম্যানহোলের ঢাকনা সরাতেও কেউ আসেননি।
অথচ বিকেলে পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অরূপ রায় বলেন, ‘‘জল নামাতে ১০টি পাম্প হাউসই চালু রয়েছে। তবে কত ক্ষণে জল নামবে, বলা যাচ্ছে না। কারণ গঙ্গার জলস্তর না কমলে শহর থেকে জল নামবে না। আমাদের কর্মীরা সকলেই রাস্তায় নেমে কাজ করছেন।’’