শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে তারকেশ্বর স্টেশনে এ রকমই ভিড় হয়। ফাইল চিত্র
রেললাইনে কাজের জন্য পূর্ব রেলের হাওড়া-তারকেশ্বর শাখায় বেশ কয়েক জোড়া লোকাল ট্রেন বন্ধ রয়েছে গত এপ্রিল মাস থেকে। আগামী অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই সূচি কার্যকর থাকার কথা। পরিস্থিতির জেরে বিশেষত সকাল এবং সন্ধ্যায় ব্যস্ত সময়ে নাকাল হচ্ছেন নিত্যযাত্রীরা। তার উপরে, তারকেশ্বরে শ্রাবণী মেলার দিন এগিয়ে এসেছে। এই সময় অসংখ্য ভক্তের সমাগম হয় তারকেশ্বরে। ফলে, কম সংখ্যক ট্রেন বিপুল দর্শনার্থীর চাপ কী করে সামাল দেবে, সেই প্রশ্ন উঠছে। রেল কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন, শ্রাবণী মেলার সময় অতিরিক্ত ট্রেন চালানো হবে।
আগামী ১৩ জুলাই গুরুপূর্ণিমা। ওই দিন থেকেই শ্রাবণী মেলা শুরু। মেলা চলে এক মাস। দুর্ভোগ এড়াতে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি তুলেছেন নিত্যযাত্রীরা। তাঁদের বক্তব্য, ট্রেন না বাড়ালে তাঁদের পক্ষে যাতায়াত করা অসম্ভব হবে। এর আগেই অফিসযাত্রীদের কথা ভেবে অন্তত তিন জোড়া ট্রেন বাড়ানোর দাবিতে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে নিত্যযাত্রীদের সংগঠন তারকেশ্বর লাইন প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন।
ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হরদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সকালে অফিসে যাওয়া এবং সন্ধ্যায় ফেরার সময় এই শাখার ট্রেনে কী রকম বাদুড়ঝোলা অবস্থা হয়, তা দেখলেই নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগ বোঝা যাবে। শ্রাবণী মেলায় লাখো মানুষ আসেন। ট্রেন না বাড়ালে মাঝের স্টেশন থেকে নিত্যযাত্রীরা ট্রেনে উঠতেই পারবেন না। দুর্ঘটনা, গোলমালের আশঙ্কা বাড়বে।’’
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে অতিরিক্ত ট্রেন চালানো হবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে, কত ট্রেন অতিরিক্ত চলবে, তা চূড়ান্ত হয়নি।’’
সোমবারকে ‘শিবঠাকুরের বার’ বলা হয়। শ্রাবণী মেলার সময় সোমবার তারকেশ্বরে ভিড় উপচে পড়ে। তারকেশ্বর থেকে দিয়ারা পর্যন্ত সড়কপথও কার্যত ‘জলযাত্রী’দের দখলে চলে যায়। ফলে, সড়কপথেও যাতায়াত করার উপায় থাকবে না। সেই কারণে, সমস্যা সমাধানে নির্ধারিত সময়ে অন্তত তিন জোড়া লোকাল ট্রেন এবং ‘মেলা স্পেশাল’ ট্রেন চালানোর দাবি তুলছেন নিত্যযাত্রীরা।
নিত্যযাত্রী সংগঠনের কর্মকর্তাদের বক্তব্য, রেলের উন্নয়নমূলক কাজ করতেই হবে। কিন্তু যাত্রীদের অবর্ণনীয় পরিস্থিতি যাতে যথাসম্ভব লাঘব করা যায়, তা-ও দেখতে হবে। গত এপ্রিল মাসে ১১ জোড়া ট্রেন বাতিল করা হয়। আগামী ৫ অগস্ট পর্যন্ত নতুন সূচি কার্যকর করার কথা বলা হয়। পরে যাত্রীদের দাবি মেনে ৩ জোড়া ট্রেন চালু করা হয়। তাতেও পরিস্থিতি বিশেষ শুধরোয়নি।
নিত্যযাত্রীদের খেদ, পরিস্থিতির কথা রেলের আধিকারিকদের বার বার জানানো হলেও সমস্যা মেটেনি। গত ২০ এপ্রিল হাওড়ার ডিআরএমের সঙ্গে দেখা করে অফিসের ব্যস্ত সময়ে তিনটি ট্রেন চালানোর আর্জি জানানো হয়। রেলের তরফে এ ব্যপারে আশ্বাস মেলে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। এখন শ্রাবণী মেলার মুখে দুর্ভোগ বাড়ার আশঙ্কায় নিত্যযাত্রীরা চিন্তিত। হুগলির জেলাশাসকের দফতরে ই-মেল করেও বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে হরদাসবাবু জানান।
নিত্যযাত্রী সংগঠনের দাবি, ভোর ৩টে ৫০ মিনিটের তারকেশ্বর-হাওড়া, সকাল সাড়ে ৮টার হরিপাল-হাওড়া এবং বিকেল ৫টা ৪২ মিনিটের হাওড়া-তারকেশ্বর লোকাল এখনই চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে।