— প্রতীকী চিত্র।
ভিখারি সেজে জল খেতে চেয়ে ঘরে ঢুকে ডাকাতি করার ঘটনার কথা জানা আছে। কিন্তু গল্প করতে করতে ডাকাতির কথা শুনেছেন কি? হুগলির ব্যান্ডেলে এক বৃদ্ধার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। চার ডাকাত মধ্যরাতে ঘরে ঢুকে বৃদ্ধার সঙ্গে গল্পগুজব করতে করতে সর্বস্ব লুট করে চম্পট দেয়।
ব্যান্ডেলের নলডাঙায় থাকেন বছর ৬৮-র রেণুরানি পাল। স্বামী গত হয়েছেন বহু আগে। দুই মেয়েই বিবাহিত। অন্যত্র থাকেন। নলডাঙার বাড়িতে একাই থাকতেন রেণুরানি। দু’মাস মুম্বইয়ে মেয়ের বাড়িতে কাটিয়ে গত সোমবার নলডাঙার বাড়িতে ফেরেন তিনি। তাঁর বাড়িতেই গভীর রাতে ডাকাতি হয়ে গেল।
পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাত তিনটে নাগাদ ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে গিয়েছিলেন রেণুরানি। বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখেন, তাঁর শোয়ার ঘরে বসে চার মূর্তি। ঘরের আলো জ্বলছিল না, কিন্তু চার আগন্তুকের মাথায় ছিল স্পট লাইট। তাঁদের দেখে অবাক হন বৃদ্ধা। কিন্তু কিছু বলতে যাওয়ার আগে হাতের লোহার রড নাচিয়ে ঠান্ডা গলায় এক আগন্তুক তাঁকে জানিয়ে দেয়, জোরে কথা বললে ওই রড পড়বে তাঁর মাথায়। এ সব শুনে আর কথা বাড়ানোর সাহস পাননি রেণুরানি। ওই চার যুবক বৃদ্ধার গা থেকে সমস্ত গয়না খুলে নেয়। বৃদ্ধার কান থেকে দুল খুলতে সমস্যা হচ্ছিল, বৃদ্ধা তখন নিজেই দুল খুলে ডাকাতদের হাতে তুলে দেন। এর পর, রেণুরানির হাত ও পা কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। শুইয়ে দেওয়া হয় বিছানায়। পাশে বসে এক যুবক বৃদ্ধার সঙ্গে গল্পগুজব শুরু করে। সন্তান ক’জন, জামাই কী করে, স্বামী কবে মারা গেলেন, কী ভাবে মৃত্যু হয়েছিল— সবই জানতে চায় যুবকেরা। রেণুরানি নিজের মতো করেই সে সবের জবাবও দিতে থাকেন। বৃদ্ধাকে যুবকেরা জিজ্ঞেস করে, ‘‘আলমারির চাবি কোথায়?’’ রেণুরানি বলেন, ‘‘খুঁজে নাও।’’ খোঁজাখুঁজি করেও চাবি পাওয়া যায়নি। তখন বৃদ্ধাই দেখিয়ে দেন, কোথায় রাখা থাকে চাবি। এর পর আলমারি খুলে সর্বস্ব লুট করে ডাকাত দল। বৃদ্ধার দাবি, প্রায় দু’ভরি সোনার গয়না এবং নগদ ৩৬ হাজার টাকা খোয়া গিয়েছে। এ ছাড়াও ব্যাঙ্কের পাসবই, চেকবই প্রভৃতি নিয়ে গিয়েছে ডাকাতেরা। বৃদ্ধার এক আত্মীয়ের দাবি, গোটা ঘর লন্ডভন্ড করার পর রেণুরানির একটি শাড়িও ঝোলায় পুরে নেয় ডাকাতেরা।
রেণুরানি বলছেন, ‘‘রাত তিনটে নাগাদ বাথরুমে গিয়েছি। বেরিয়ে এসে দেখি, চার জন আমার খাটে বসে। মাথায় আলো জ্বলছে। আমাকে বলল, আপনি শুয়ে পড়ুন। এক জন আমার পাশে বসে রইল। বাকি তিন জন গয়নাগুলো খুলে নিল। তার পর আলমারির চাবি চাইল। আমি বললাম, খুঁজে নাও। আমি বলেছিলাম, আমাকে মারবি না। কানের দুলটা খুলতে পারছিল না। আমিই খুলে দিলাম। একটা শাড়িও প্লাস্টিকের থলেতে ঢুকিয়েছে। যখন চলে যাচ্ছে, আমি বললাম, ‘‘টিভিটাও নিয়ে যা! ওটা আর রেখে যাবি কেন? কিন্তু টিভি নিল না।’’
বৃদ্ধার দাবি, ডাকাতেরা সকলেই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল। এক ডাকাত বিছানা দেখে শুয়েও পড়েছিল। কিন্তু বাকি ডাকাতেরা তাকে ঘুম থেকে তুলে দেয়। রেণুরানি বলছেন, ‘‘এক জন এখানে ধপাস করে শুয়ে পড়ল। তখন বাকিরা তাকে তুলে দিয়ে বলছে, ‘তুই কি শুতে এসেছিস এখানে?’ তার পর সে-ও উঠে বসল।’’
প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে ‘অপারেশন’ চললেও ঘুণাক্ষরেও কেউ টের পাননি, পাশের বাড়িতে কী চলছে। বৃদ্ধার আত্মীয়া মিতা পালের দাবি, গভীর রাতে নিঃশব্দে ডাকাতি করা হয়েছে বলেই কেউ টের পাননি। কোদালিয়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সদস্য শুভঙ্কর রাহা বলেন, ‘‘বড় রাস্তায় পুলিশ টহল দেয়। কিন্তু ভিতরের অলিগলিতে পুলিশের পেট্রলিং গাড়ি ঢোকে না। এর আগে পুরনো কোদালিয়াতে এ ধরনের একটি ঘটনা হয়েছিল, তবে নলডাঙ্গায় এই প্রথম। দুষ্কৃতীদের ধরুক পুলিশ। পুলিশি টহল আরও বৃদ্ধি পাক, এটাই চাইব।’’