পাকার আগেই পেড়ে ফেলা হচ্ছে আম। —নিজস্ব চিত্র।
অতিমারিতে বিক্রিবাটা নেই বললেই চলে। তার উপর ঘূর্ণিঝড়ের চোখরাঙানি। দুইয়ে মিলে ঘুম ছুটেছে রাজ্যের আম ও লিচুচাষিদের। মোটা টাকার বিনিময়ে আমবাগান ইজারা নিয়ে লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা করেছিলেন যাঁরা, মাথায় হাত তাঁদেরও। সকলের আশঙ্কা, চাইলেও শেষ মুহূর্তে গাছ থেকে সব আম-লিচু পেড়ে ফেলা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে তীব্র বেগে ঝড় আছড়ে পড়লে, ফের তছনছ হয়ে যেতে পারে সবকিছু। কারণ গতবছর আমপানের তাণ্ডবে বিপুল ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল তাঁদের।
পোলবা, দাদপুর, বলাগড়, সিঙ্গুর-সহ হুগলির জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আমচাষ হয়। সেখান থেকেই হিমসাগর, ল্যাংড়া, সরি, আম্রপালি, মল্লিকার মতো সুস্বাদু গাছপাকা আমের আমদানি হয় শহর এবং শহরতলিতে। গতবার আমপানের ফলে সেই জোগানে ঘাটতি দেখা দেয়। এ বার বাদ সাধছে ইয়াস। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার গতিতে বাংলার বুকে আছড়ে পড়তে পারে ইয়াস, যা কি না আমপানের চেয়ে অনেকটাই বেশি। তাই ফল তো দূরের কথা, গাছ বেঁচে থাকবে কি না, তা ভেবেই কুল কিনারা করতে পারছেন না আম ও লিচুচাষিরা। শুধু তাই নয়, ঝড়ের পর ক্ষতি কী ভাবে পুষিয়ে উঠবেন, তা-ও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সকলের।
আম ব্যবসায়ী রমেশ দাস বলেন, ‘‘১৪ লাখ টাকা দিয়ে আম বাগান ইজারায় নিয়েছি। কুড়ি শতাংশ আম বিক্রি হয়েছে। গাছে এখনও ৮০ শতাংশ আমই রয়েছে। ঝড় আসার আগে সব পেড়ে ফেলা সম্ভব নয়। বিক্রি তো অনেক দূরের কথা। তবে ঝড়ে সমস্ত আম পড়ে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।’’ অন্য এক ব্যবসায়ী বিধান পাল বলেন, ‘‘বহু মানুষ আমের ব্যবসা করেন। ইজারায় আম বাগান নিই আমরা। টাকা দিয়ে লোক আনতে হয়। তারাই আম পেড়ে দেয়, ঝাঁক দেয়, বাজারে নিয়ে যায়। গাড়িতে চাপিয়ে আশেপাশের জেলা এবং ভিন্ রাজ্যে পাঠানো হয় আম। কিন্তু লকডাউনে বাজার খারাপ ছিলই। তার উপর আবার ঝড়। আম পাকানোর জন্য কুড়ে ঘর তৈরি করতে হয়। ঘূর্ণিঝড় এলে সব উড়ে যাবে।’’ আমপানের সময় আমের জন্য কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি বলেও জানান তিনি। তাই এ বারেও যদি ক্ষতি হয়, কী করবেন জানা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
সুস্বাদু ফজলি আমের জন্য পরিচিত মালদহেও আমচাষিদের একই অবস্থা। মুর্শিদাবাদর লালবাগ, জিয়াগঞ্জ ও জঙ্গিপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় আম এবং লিচু, দুইয়েরই চাষ হয়। এক দিকে কোভিড, অন্য দিকে ইয়াস, আতঙ্কে দিন কাটছে সেখানকার চাষীদেরও। সময়ের আগেই যতটা পারছেন ফল পেড়ে নিচ্ছেন তাঁরা। সরকারি সাহায্য পেলে কিছুটা হলেও সমস্যা কাটবে বলে আশাবাদী তাঁরা।