তৃণমূলের মঞ্চে রাজাপুর থানার ওসি কৌশিক পাঁজা। —নিজস্ব চিত্র।
সামনে লোকসভা নির্বাচন। আর তার আগে তৃণমূলের আয়োজিত এক রক্তদান শিবিরে সংবর্ধনা নিতে চলে গেলেন কর্তব্যরত এক পুলিশ আধিকারিক। মঙ্গলবার উলুবেড়িয়া- ২ ব্লকের বাণীবনের ঘটনা। এ দিন অঞ্চল তৃণমূলের রক্তদান শিবির অনুষ্ঠানে রাজাপুর থানার ওসি কৌশিক পাঁজাকে সংবর্ধনা জানালেন তৃণমূল নেতারা। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। নিরপেক্ষাতার প্রশ্ন তুলে ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে বিরোধীরাও।
মঙ্গলবার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিবস উপলক্ষে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিল বাণীবন অঞ্চল তৃণমূল। মঞ্চ সাজানো হয়েছিল তৃণমূলের পতাকা, ফ্লেক্স, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে। সেখানেই রক্তদান শিবির শুরুর আগে রাজাপুর থানার ওসি কৌশিক পাঁজাকে সংবর্ধনা জানানো হয়। মঞ্চে উলুবেড়িয়া উত্তরের বিধায়ক নির্মল মাজির পাশেই বসেছিলেন কৌশিক। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূলের সভাপতি বিমল দাস, হাওড়া জেলা পরিষদের একাধিক সদস্যও।
একজন সরকারি কর্মী কী ভাবে কর্তব্যরত অবস্থায় রাজনৈতিক দলের থেকে সংবর্ধনা নিতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাওড়া গ্রামীণ জেলা বিজেপি সভাপতি অরুণ উদয় পালচৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘এই রাজ্যের পুলিশ তো ‘মমতা পুলিশ’-এ পরিণত হয়েছে। পুলিশ তৃণমূলের দলদাস হয়ে গিয়েছে। অনেকবার আমরা এক কথা বলেছি। এ বার তার প্রমাণ মিলল।’’
হাওড়া জেলা সিপিএমের সম্পাদক দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এ রাজ্যে আইন, সংবিধান বলে কিছুই নেই। যেমন রাজ্য সরকার আর তেমন তার পুলিশ। বোঝাই যাচ্ছে, তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে এই রাজ্যের পুলিশ।’’ বাণীবনের পঞ্চায়েত সদস্য তথা কংগ্রেস নেতা সুব্রত বেরার ক্ষোভ, ‘‘তৃণমূলের দলীয় কর্মসূচিতে গিয়ে ওসি তো ওদের পাশে থাকার বার্তা দিলেন। এটা কাম্য নয়।’’
এ বিষয়ে ওসি কৌশিক পাঁজার সাফাই, ‘‘রক্তদান শিবির একটি সামাজিক কাজ। তাই গিয়েছিলাম। তৃণমূলের অনুষ্ঠান হিসেবে কিন্তু যাইনি।’’ আর হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার স্বাতী ভাঙালিয়া এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এ দিনের ঘটনা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত তৃণমূল নেতৃত্বও। নির্মল মাজির বক্তব্য, ‘‘কোনও সামাজিক কর্মসূচিতে কি পুলিশের যেতে বাধা আছে? এ নিয়ে বিতর্কের কী আছে?’’ তবে বিষয়টি ঠিক হয়নি বলে মত হাওড়া গ্রামীণ জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা বাগনান কেন্দ্রের বিধায়ক অরুণাভ সেনের। তিনি বলেন, ‘‘বিস্তারিত খোঁজ নিতে হবে। তবে উর্দি পরে রাজনৈতিক দলীয় কর্মসূচিতে যাওয়া ঠিক হয়নি ওই পুলিশ আধিকারিকের।’’