আকনা পঞ্চায়েত।
উপপ্রধানের দাপটে গত এক বছর ধরে পঞ্চায়েতে ঢুকতে পারছেন না মহিলা প্রধান। এমনই অভিযোগে দল এবং প্রশাসনের কাছে লিখিত নালিশ জানিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, সমস্যার সুরাহা হয়নি। তার প্রভাব পড়ছে পঞ্চায়েতের পরিষেবায়। বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। গোটা ঘটনায় শোরগোল পড়েছে হুগলি পোলবা-দাদপুর ব্লকের আকনা পঞ্চায়েতে। তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল রাস্তায় নেমে এসেছে। আগামী বছর পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে এমন ঘটনায় শাসক দল অস্বস্তিতে।
উপপ্রধানের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতে ঢুকতে না দেওয়ার একই অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল এবং বিরোধী সদস্যদের একাংশও। তাঁদের অভিযোগ, ‘জঙ্গলরাজ’ চলছে। উপপ্রধান নির্মলেন্দু ঘোষ অভিযোগ মানেননি।
আকনা পঞ্চায়েতে আসন ১৭টি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৃণমূল ১০টি এবং বিজেপি ৭টি আসনে জেতে। তৃণমূলের একটি সূত্রের অভিযোগ, জেলার এক বিধায়কের স্নেহধন্য বলে পরিচিত নির্মলেন্দু গত বিধানসভা ভোটের পরে পঞ্চায়েতে কার্যত ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেন। কেকার অভিযোগ, গত ২ মে বিধানসভা ভোটের ফল বেরনোর পর থেকে তিনি পঞ্চায়েতে ঢুকতে পারছেন না।
প্রধান বলেন, ‘‘উপপ্রধান বলপূর্বক পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ওঁর পাশে না থাকায় আমাকে বা অন্য সদস্যদের পঞ্চায়েতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ওঁর লোকজন আমাদের বাড়িতে গিয়েও হুমকি দেওয়ায় আতঙ্কে দফতরে যাওয়া যাচ্ছে না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মানুষের কথা ভেবে বাড়ি থেকে যথাসম্ভব কাজ করছি। কিন্তু এলাকার উন্নয়ন বা মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার সব কাজ তো বাড়িতে বসে করা সম্ভব নয়।’’ তাঁর খেদ, দলের জেলা নেতৃত্ব থেকে পোলবা থানা, বিডিও-সহ নানা দফতরে অভিযোগ জানালেও পরিস্থিতির হেরফের হয়নি। এক বিজেপি সদস্য বলেন, ‘‘আমরা প্রধানের সঙ্গে মানুষের কাজ করতে চাই। কিন্তু, উপপ্রধানের জন্য তা হচ্ছে না।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, গত শুক্রবার বিডিও সব সদস্যদের নিয়ে পঞ্চায়েতে বৈঠক ডেকেছিলেন। বিজেপির অভিযোগ, বৈঠকের আগে উপপ্রধানের দলবল প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে বিজেপি সদস্যদের দিয়ে একটি কাগজে সই করিয়ে নেয়। প্রধান হিসাবে উপপ্রধানের উপরে আস্থা আছে, এই মর্মেই ওই কাগজে বয়ান লেখা ছিল। এ ব্যাপারে পুলিশে মৌখিক অভিযোগ করেন বিজেপি সদস্যরা। তৃণমূল সদস্যদের একাংশের অভিযোগ, তাঁদেরও বৈঠকে যেতে বাধা দেওয়া হয়। সদস্যরা না যাওয়ায় বৈঠক বাতিল হয়ে যায়।
যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে উপপ্রধান নির্মলেন্দুর দাবি, ‘‘এলাকার উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করতে অপপ্রচার করা হচ্ছে। বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে বিরোধীদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে প্রধান-সহ আমাদের দলের অন্যরা এলাকার উন্নয়নে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রধান নিজেই পঞ্চায়েতে আসেন না। আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলে দলের ও পঞ্চায়েতের বদনাম রটাচ্ছেন।’’