নমামি প্রকল্পের কাজ চলছে চুঁচুড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।
গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে চুঁচুড়া পুর এলাকায় ‘'নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পে নিকাশির পাইপ বসানো হচ্ছে প্রায় ৮ মাস ধরে। কেন্দ্রীয় এই প্রকল্পের কাজ করছে কেএমডিএ। কিন্তু কথা অনুযায়ী তিন বছরের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন হবে কি না, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কাজে ঢিলেমির অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার চুঁচুড়ার তোলাফটক মাছ বাজারে যান বিধায়ক অসিত মজুমদার। তিনি কেএমডিএ-র জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার আফসার মল্লিককে তোলাফটক পর্যন্ত কাজ শেষ করার সময়সীমা এক সপ্তাহ বেঁধে দিলেন। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
অসিত বলেন, "সামনেই বিয়ের মরসুম। তোলাফটক-খুশিগলি রুটে প্রায় ৬টি অনুষ্ঠান-বাড়ি রয়েছে। স্থানীয়েরাও দ্রুত কাজ শেষ করার আবেদন জানিয়েছেন। সকলের কথা ভেবেই আমি সাত দিনে কাজ শেষ করতে বলেছি।’’ আফসার বলেন, ‘‘দিনরাত এক করে প্রতিদিন ৫টি করে পাইপ বসাতে পারলে ৭ দিনে বাকি ১৪০ মিটার কাজ সম্পন্ন হবে। কিন্তু দ্রুত মাটি খুঁড়তে গেলে জলের লাইন ফেটে যাচ্ছে, কাটছে বিদ্যুতের লাইনও। তা মেরামত না করে পাইপ বসানো যাবে না। হিতে বিপরীত হতে পারে।’’
পুরসভা সূত্রে খবর, ‘নমামি গঙ্গে’র জন্য মাটি খুঁড়ে নিকাশির পাইপ বসানো থেকে রাস্তা নতুন ভাবে তৈরি করে দেওয়া পর্যন্ত পুরো কাজটিই কেএমডিএ-র তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। বর্তমানে শহরের গঙ্গাপাড়ের প্রায় সব ক’টি ওয়ার্ড থেকেই দূষিত নিকাশির জল নদীতে পড়ে। যার মধ্যে একটি অংশের নিকাশি ব্যবস্থা সেই পর্তুগিজ আমলের। সেই ব্যবস্থাও ভেঙে দিয়ে ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পে নতুন পাইপ বসানো হবে। কাজ শেষ হলে শহরের মোট চারটি ইউনিটের মাধ্যমে দূষিত জল পরিষ্কার হয়ে শুধুমাত্র তুলাপট্টি ঘাটে গঙ্গায় মিশবে। পাশাপাশি নিকাশির অবশিষ্ট অংশ (পাঁক) প্রথমে তালডাঙা এবং পরে মহামায়া কলোনিতে থাকা ‘সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টে’ (এসটিপি) সার তৈরির জন্য পৌঁছে যাবে।
পুর-পারিষদ জয়দেব অধিকারী জানান, ইতিমধ্যে তালডাঙা থেকে তোলাফটক, কেওটা ত্রিকোণ পার্ক থেকে বালি মোড়, চকবাজার হয়ে বকুলতলা ঘাট পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মল্লিক কাশেম হাট, খাগড়াজোল প্রভৃতি জায়গায় পাইপ বসলেও রাস্তা মেরামত হয়নি।
বর্তমানে বকুলতলা থেকে পিপুলপাতির রাস্তায় কাজ চলছে। এই রাস্তাতেই সবচেয়ে গভীরে (১৮ ফুট) পাইপ বসছে। নিয়ম অনুযায়ী মাটির নীচে প্রথমে বিদ্যুতের লাইন, তার নীচে পানীয় জলের লাইন এবং সবশেষে নিকাশির পাইপ থাকার কথা। তাই মাটি খোঁড়ার সময় অনেক ক্ষেত্রেই এলাকায়-এলাকায় বিদ্যুৎ ও জলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। তা মেরামত করে পাইপ বসাতে অতিরিক্ত সময় লাগছে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
জয়দেব বলেন, "বৃষ্টি, উৎসব-পার্বণ প্রভৃতি নানা সময়ে কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তাই নির্ধারিত তিন বছরে ‘নমামি গঙ্গে’র কাজ সম্পন্ন হবে বলে মনে হয় না।’’