চিন্তায় ক্ষতিগ্রস্তেরা। শুক্রবার চন্দ্রহাটিতে। নিজস্ব চিত্র।
মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে মাঝরাতে পাকা বাড়ি কেঁপে উঠতেই বিপদ টের পেয়েছিলেন প্রৌঢ় কাশেম আলি। স্ত্রী, মেয়ে, দুই ছেলে, তিন নাতি-নাতনি নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসেন রাস্তায়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই চোখের সামনে ধসে যায় শৌচাগার। ঘণ্টা পাঁচেকের মধ্যে পাশের আরও দু’টি বাড়ির রান্নাঘর এবং উঠোন প্রায় চার ফুট গর্তে ঢুকে যায়। আতঙ্কে ঘুম উবে যায় গোটা পাড়ার।
ভূমিকম্প নয়, গঙ্গার ভাঙনে বৃহস্পতিবার রাতে এই বিপর্যয় ঘটে বলাগড়ের চন্দ্রহাটি ২ পঞ্চায়েতের চন্দ্রহাটি গ্রামে। শুক্রবার পরিস্থিতি দেখে যান প্রধান স্বরূপচন্দ্র বর্মণ। তাঁর দাবি, বাড়িগুলি গঙ্গার পার লাগোয়া বলে ধেড়ে ইঁদুর গর্ত খুঁড়ছে। এতে মাটি আলগা হচ্ছে। ফলে দু’দিনের বৃষ্টিতে গঙ্গার স্রোত বাড়ায় ঢেউ এসে ধাক্কা মারলেই মাটি বসে যাচ্ছে। এলাকা ঘুরে গিয়ে বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। প্রধান বলেন, ‘‘ভাঙনের কবলে পড়া মানুষদের আপাতত পঞ্চায়েত কার্যালয় এবং স্থানীয় স্কুলগুলিতে থাকতে বলা হয়েছে। ওঁদের সব রকম সাহায্য করা হবে।’’ হুগলি জেলা সভাধিপতি রঞ্জন ধারাও বলেন, ‘‘চন্দ্রহাটির ভাঙনের বিষয়টি শুনেছি। ওঁদের সব রকম সহযোগিতা করব।’’
এ দিন ভোর ৪টে নাগাদ ‘গেল গেল’ চিৎকারে ঘুম ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসেন শেখ ঝন্টু আলির পরিবারের লোকেরা। দেখেন, রান্নাঘর ভেঙে গর্তে ঢুকে যাচ্ছে। শোওয়ার ঘরে ফাটল ধরেছে। ঝন্টু বলেন, ‘‘বাড়িতে থাকতে ভয় হচ্ছে।’’ আতঙ্কে তাঁর পডশি সঞ্জীব সরকারও। ভোরে তাঁর উঠোনও ধসে পড়েছে। বাড়ির নীচের মাটি সরেছে। সঞ্জীব বলেন, ‘‘বাড়ি ধসে পড়লে কোথায় যাব, জানি না।’’ গঙ্গার পার লাগোয়া আরও গোটা দশের বাড়ির লোক একই কারণে ডরাচ্ছেন।
বলাগড়ের ১৭টির মধ্যে ১২টি (গুপ্তিপাড়া ১ ও ২, চর কৃষ্ণবাটী, সোমড়া ১ ও ২, শ্রীপুর-বলাগড়, জিরাট, সিজা কামালপুর, ডুমুরদহ নিত্যানন্দপুর ১ ও ২, চন্দ্রহাটি ১ ও ২) দীর্ঘদিন ধরেই ভাঙনপ্রবণ। বছর পনেরো আগে জিরাট পঞ্চায়েতের রানিনগর মৌজা গঙ্গায় তলিয়ে যায়। চর জাগে নদিয়ার চাকদহের প্রান্তে। দুর্লভপুর মৌজার একাংশও জলে। চর খয়রামারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাংশও জলে চলে গিয়েছে। সম্প্রতি শ্রীপুর-বলাগড় পঞ্চায়েতের চাঁদরা গ্রামে সেচের মোটরঘর হেলে পড়ে। এ বার চন্দ্রহাটি। গঙ্গার হানাদারি চলছেই।
বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ ছিল, বলাগড়ে ভাঙন রোধে কেন্দ্র থেকে টাকা এসে ফেরত গিয়েছে। ভাঙন নিয়ে সংসদে বলতে গেলে তৃণমূল সাংসদরা তাঁকে থামিয়ে দিতেন। তৃণমূল এই অভিযোগ কোনও সময়েই মানেনি। ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না হওয়ায় তারা বরাবরই কেন্দ্রকে দুষেছে।
গত লোকসভা ভোটের প্রচারে তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতি ছিল, জিতলে সংসদে প্রথম বক্তব্যই পেশ করবেন বলাগড়ের ভাঙনের সমস্যা নিয়ে। রচনা সাংসদ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে রচনার জবাবে অবশ্য স্পষ্ট, এই বিষয়ে তিনি সম্যক ওয়াকিবহাল নন। সাংসদ বলেন, ‘‘আগে ভাল করে গঙ্গা ভাঙনের বিষয়টি বুঝব। তারপরে লোকসভায় এ বিষয়ে বলব।’’