ফাইল চিত্র।
মাত্র তিন মাসের মধ্যে ফের রদবদল হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীতে। রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়কে সরিয়ে চেয়ারপার্সন করা হল শিশু-রোগ চিকিৎসক সুজয় চক্রবর্তীকে। দশ সদস্যের প্রশাসকমণ্ডলীতে এক জন বাদে বাকিরা সকলেই হাওড়া পুরসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর। কিন্তু যাঁকে নতুন চেয়ারপার্সন করা হল, তাঁকে এই পদে বসানোর পিছনে কি কোনও বৃহত্তর দায়িত্বের ইঙ্গিত রয়েছে? এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। কারণ এর আগে যিনি হাওড়ার বিদায়ী মেয়র ছিলেন, তিনি যে পরিবারের সদস্য, সুজয়বাবুও সেই পরিবার থেকে এসেছেন। যদিও গত পুর নির্বাচনের আগে সুজয়বাবু তৃণমূলের সদস্য ছিলেন না। বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের সময়ে একটি মিছিলে খোদ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে দলীয় পতাকা নিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে নামেন তিনি।
গত তিন বছর যাবৎ হাওড়া পুরসভা পরিচালনার ভার রয়েছে প্রশাসকমণ্ডলীর হাতে। এরই মধ্যে বিভিন্ন কারণে দু’বার প্রশাসকমণ্ডলী ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। পুরসভা সূত্রের খবর, সোমবার রাতে রাজ্যের পুর দফতর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে তৃতীয় বারের জন্য প্রশাসকমণ্ডলী ভেঙে নতুন সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। পুরনো প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন অরূপবাবুকে সরিয়ে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয় সুজয়বাবুকে। এর আগে ওই দিনই ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি মেনে হাওড়া জেলায় তৃণমূলের চেয়ারম্যানের পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয় অরূপবাবুকে। জেলার সাংগঠনিক স্তরেও আমূল পরিবর্তন আনা হয়। দলীয় সূত্রের খবর, এ বার যাঁদের সরানো হয়েছে, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধেই দলবাজির অভিযোগ ছিল।
সোমবার রাতে প্রশাসকমণ্ডলীর রদবদলের খবর জানা না গেলেও মঙ্গলবার বেলা হতেই এই খবর
ছড়িয়ে পড়ার পরে শহরের রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়। প্রসঙ্গত, হাওড়ায় তৃণমূলের সংগঠন নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, দলবাজি এবং অন্তর্দলীয় বিরোধের অভিযোগ ছিল আগে থেকেই। অনেক সময়ে সেই সব অভিযোগ নানা ভাবে প্রকাশ্যেও এসেছে। এমনকি, সেই বিরোধ যখন খুব বড় আকার নিয়েছিল, তখন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বৈশাখী ডালমিয়া, রথীন চক্রবর্তীর মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতারা দল ছেড়ে চলে যান। একই দিনে দল এবং পুর প্রশাসকমণ্ডলীর এই রদবদল নিয়ে তাই যে প্রশ্নটা এখন বড় হয়ে উঠেছে তা হল, এই পরিবর্তন কি দলের ভিতরের কলহ রুখতে নতুন মুখ এনে তরুণ প্রজন্মকে জায়গা দেওয়ার বার্তা, না কি পুর ভোটের প্রস্তুতি?
হাওড়ায় দলের বিদায়ী জেলা সভাপতি (শহর) ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কিছু ভেবেই দল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের ঊর্ধ্বে আমরা কেউ নই।’’ জেলার বিদায়ী চেয়ারম্যান অরূপবাবু বলেন, ‘‘দল এক ব্যক্তি, এক পদ নীতিতে বিশ্বাসী। তাই এমন সিদ্ধান্ত। কিন্তু প্রশাসকমণ্ডলীর আমূল পরিবর্তন কেন করা হল, সেটা দলই বলতে পারবে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, ১০ সদস্যের প্রশাসকমণ্ডলীতে বাকি সদস্যেরা হলেন প্রাক্তন কাউন্সিলর সৈকত চৌধুরী, দেবাংশু দাস, মনোজিৎ রাফেল, রিয়াজ় আহমেদ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, বাপি মান্না, অনুপ চক্রবর্তী, দিলীপ ঘোষ এবং সাংবাদিক বিশ্ব মজুমদার। এঁদের মধ্যে বিশ্ববাবু ছাড়া বাকি সকলেই নতুন।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, বুধবার বিকেলে নতুন চেয়ারপার্সনের নেতৃত্বে দায়িত্ব বুঝে নেবে নবগঠিত প্রশাসকমণ্ডলী। দায়িত্ব নেওয়ার আগে সুজয়বাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে আমাকে এই পদের জন্য বেছে নিয়েছেন, তার জন্য আমি গর্বিত। দলের বরিষ্ঠ সদস্যদের মতামত নিয়েই কাজ করতে চাই।’’