—প্রতীকী ছবি।
হাওড়ার ডুমুরজলায় রবিবার রাতে মত্ত অবস্থায় এক দল দুষ্কৃতীর তাণ্ডবের ঘটনায় মূল অভিযুক্তদের মধ্যে নাম আছে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের এক নেতার। অভিযোগ, তিনিই সরকারি জমিতে মন্দির তৈরির নেপথ্য নায়ক। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই নেতার নেতৃত্বেই কয়েক মাস ধরে এলাকায় মন্দির তৈরির জন্য চাঁদা তোলার নামে চলছিল তোলাবাজি। আর তা করতে গিয়েই রবিবার রাতে ডুমুরজলা বাস্কেটবল মাঠের সামনে আক্রান্ত হন এক চিকিৎসক-সহ আরও অনেকে। সেই ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেফতার করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ লঘু ধারা দেবে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেই আশঙ্কা সত্যি করে লঘু ধারা দেওয়ার কারণে মঙ্গলবার ৯ জনেরই জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত।
স্বাভাবিক ভাবেই এ দিন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়েরা। তাঁদের অভিযোগ, মূল অভিযুক্তদের তো গ্রেফতার করতে পারেইনি পুলিশ, উল্টে লঘু ধারা দেওয়ায় ধৃতদেরও জামিন হয়ে গিয়েছে। এ দিন পর্যন্ত ওই তৃণমূল যুব নেতাকেও গ্রেফতার করেনি পুলিশ। আর তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শাসকদলেরই একাংশ। এ বিষয়ে মধ্য হাওড়া তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আমি একটা নাম শুনছি ঠিকই। তবে তিনি আমাদের দলের কিনা, জানি না। তিনি মধ্য হাওড়ার কেউ নন। যাঁরা এই কাজ করেছেন, পুলিশের উচিত তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।’’
রবিবার রাতে ডুমুরজলা বাস্কেটবল মাঠের উল্টো দিকে নির্মীয়মাণ একটি শিবমন্দিরের জন্য তোলা চেয়ে পথচলতি মানুষ এবং ডুমুরজলায় ঘুরতে আসা অনেককে মারধর করা হয়। তাতে আক্রান্ত ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘এত বড় ঘটনার পরেও হামলাকারীরা কী ভাবে জামিন পেয়ে গেল, বুঝতে পারছি না। তা ছাড়া, যাঁরা মূল অভিযুক্ত, তাঁদের এখনও গ্রেফতার করা হল না? ভীষণ আতঙ্কের মধ্যে আছি।’’ আতঙ্কে রয়েছেন শিবপুর এলাকার বাসিন্দা বড়বাজারের পাঁচ ব্যবসায়ী ও তাঁদের পরিবারও। ঘটনার দিন ওই চিকিৎসকের আগে হামলার মুখে পড়েছিলেন তাঁরাও। তবে আগে তাঁরা এ নিয়ে কিছু বলতে না চাইলেও মঙ্গলবার জানান, ঘটনার দিন বড়বাজার থেকে ফেরার সময়ে তাঁরা যখন গাড়িতে বসে চা খাচ্ছিলেন, তখন এক দল মত্ত যুবকের হাতে আক্রান্ত হন। ওই পঁচ জনকে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয় বলে অভিযোগ।
ফাহাদ আহমেদ নামে এক আক্রান্ত ব্যবসায়ীর বাবা এজাজ আহমেদ বলেন, ‘‘ওরা বিনা কারণে আমাদের পাঁচ জন ছেলেকে রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, আমার ছেলের গলার রুপোর চেন ও মোবাইলও ছিনতাই করে নিয়েছিল। এমনকি, যখন চ্যার্টাজিহাট থানায় পুলিশ দু’পক্ষকে মীমাংসার জন্য ডাকে, তখন দেখি, ওই যুবকেরা মোটরবাইকের পিছনে স্টিলের রড নিয়ে এসেছে মীমাংসার জন্য। এই দেখে আমরা ভয়ে আর অভিযোগ দায়ের করিনি।’’
তোলা চেয়ে তাণ্ডবের এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা ডুমুরজলা এলাকা জুড়ে। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, মন্দির তৈরির কাজ বন্ধ। বন্ধ সমস্ত দোকানপাটও। এলাকা প্রায় ফাঁকা। নির্মীয়মাণ মন্দিরের সামনে ঝুলছে তৃণমূল নেতৃত্বের ছবি দেওয়া একটি ব্যানার। এলাকার একটি চায়ের দোকানের মালিক বললেন, ‘‘এখানে রাতে আর ব্যবসা করা যায় না। সন্ধ্যা হলেই মদ-জুয়া আর গাঁজার আসর বসে। এর পরেও পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে রবিবারের থেকেও বড় ঘটনা ঘটতে পারে।’’
হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘রবিবারের ঘটনায় সমস্ত ধৃতেরা জামিন পেয়ে গিয়েছে শুনেছি। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। কাউকে রেয়াত করা হবে না। তবে অভিযুক্তেরা সকলেই পলাতক।’’ বর্তমানে ‘ডুমুরজলা খেল সিটি’র দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ক কমিটির চেয়ারম্যান তথা হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রবিবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শীঘ্রই এলাকা ঘুরতে যাব। এ নিয়ে কমিটিতে আলোচনার পরে সরকারি জমি দখলদারি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’