পরিজনদের সঙ্গে বাড়ির পথে সঞ্চিতা। নিজস্ব চিত্র।
নিজের আঙুলের ছাপই আট বছর পরে বাড়ি ফেরাল এক হারানো যুবতীকে!
বুধবার, বিশ্ব অটিজ়ম দিবসের দুপুরে হাওড়ার উলুবেড়িয়ার কাঠিলায় মানসিক প্রতিবন্ধীদের হোম উলুবেড়িয়া আশা ভবন সেন্টারের উঠোনে বাবা-দিদি এবং অন্য আত্মীয়দের দেখেই ছুটে এসে তাঁদের জড়িয়ে ধরলেন সঞ্চিতা হীরা নামে বছর পঁচিশের ওই যুবতী। সকলেই তখন কাঁদছেন। চোখে জল হোমের আবাসিকদের চোখেও।
সঞ্চিতার বাড়ি নদিয়ার চাকদহের ঘোড়াঘাটা গ্রামে। ছয় বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে সঞ্চিতা ছোট। মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ের পড়াশোনা শুরু হয়েছিল দেরিতে। ২০১৭ সালে নভেম্বর মাসে কাছেই দিদির বাড়ি থেকে ফেরার পথে তিনি হারিয়ে যান। তখন তিনি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। বয়স সতেরো। পরের দিন চাকদহ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন দাদা সুদীপ্ত। টানা দু’বছর বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে বেরিয়েছেন আত্মীয়-স্বজন। কোথাও খোঁজ মেলেনি।
আশা ভবন হোমের সুপারিন্টেন্ডেন্ট অরুণিমা জাসু জানান, ২০১৮ সালের গোড়ায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সঞ্চিতাকে তাঁদের কাছে দিয়ে যান। তবে নাম বলেছিলেন ‘মেহেন্দি’। সেই নামেই তাঁকে ডাকা হত। হোমের অন্য মেয়েদের সঙ্গে পড়াশোনা করতেন তিনি। তবে নিজের পরিচয় বা বাড়ি কিছুই বলতে পারেননি।
বাড়ির খোঁজ মিলল কী ভাবে?
অরুণিমা জানান, সম্প্রতি আধার কার্ড তৈরির জন্য মেহেন্দির আঙুলের ছাপ নিতেই যন্ত্রে লেখা ভেসে ওঠে, ‘সঞ্চিতা হীরা। চাকদহ, নদিয়া’। তাঁরা বুঝতে পারেন, আগেভাগেই সরকারি নথি রয়েছে তাঁর নামে। এর পরেই আশা ভবনের সভাপতি শ্যামা মান্না এক সহকর্মীকে নিয়ে মেহেন্দির বাড়ির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন। দিন চারেক আগে বাড়িতে পৌঁছে যান। স্পষ্ট হয় মেহেন্দির আসল পরিচয়। বাবা শ্রীদাম হীরা বলেন, ‘‘সঞ্চিতা আমাদের সকলের প্রিয়। ওঁকে খুঁজে পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। ওঁরা মেয়ের ছবি দেখানোয় প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলাম। ওঁরা ভিডিয়ো কলে মেয়েকে দেখান।’’
বুধবার বড় গাড়ি করে বাড়ির লোকেরা সঞ্চিতাকে আনতে যান। সঙ্গে হোমের আবাসিকদের জন্য রসগোল্লা, ঠান্ডা পানীয়। মিষ্টি ব্যবসায়ী শ্রীদাম বলেন, ‘‘বাকি ছেলেমেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ভরা সংসারেও সঞ্চিতার অভাব থেকে গিয়েছিল। এ বার মিটল।’’ সঞ্চিতার মা শান্তি বর্তমানে পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী।
আশা ভবনের ডিরেক্টর জন মেরি বারুই বলেন, ‘‘এ দিন অটিজ়ম দিবস উদযাপন করেছে হোমের মেয়েরা। এ দিনই সঞ্চিতা হয়ে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে গেল আমাদের মেহেন্দি। আমাদের কাছে এ বড় খুশির দিন।’’
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে