জখম সার্থক (ইনসেটে)। প্রতিবাদে অভিভাবকদের বিক্ষোভ। চুঁচুড়ার এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। নিজস্ব চিত্র।
গত শনিবার চুঁচুড়ার খাদিনা মোড়ের কাছে একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্র চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছিল। স্কুলের মধ্যে ওই ঘটনা ঘটলেও দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে বাড়িতে খবর দিয়েই দায় সেরেছেন কর্তৃপক্ষ, এই অভিযোগে মঙ্গলবার ওই বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখালেন অভিভাবকরা।
পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ আসে। বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ লিখিত ভাবে চুঁচুড়া থানায় জানান ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা। গাফিলতির অভিযোগ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মানেননি। তবে, ছাত্রটি কী ভাবে জখম হল, তা নিয়ে কিছুটা ধন্দ তৈরি হয়েছে। চন্দননগর কোর্ট মোড়ের বাসিন্দা সার্থক সাউ নামে ওই ছাত্রের চোখের চিকিৎসা চলছে।
অধ্যক্ষা প্রদীপ্তা চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বিদ্যালয়ের দেওয়ালে লেগে ছেলেটি জখম হয়েছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গেই বাড়িতে খবর দিয়েছি। ঘটনায় বিদ্যালয়ের কোনও গাফিলতি ছিল না।’’ সার্থক সাউ নামে জখম ওই ছাত্রটি অবশ্য বলে, ‘‘সে দিন টিফিনের সময় জল খেয়ে ক্লাসে ঢুকছিলাম। তখন কেউ আমাকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখে অন্ধকার দেখি। পরে যখন একটু ঠিক হয়, তখন অন্য একটি ঘরে ছিলাম। একজন আমাকে এসে বললেন, ‘বলবে ক্লাসে ঢোকার সময় দরজায় লেগে গিয়েছে’। এরপর আমি মনে হয় ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। আর কিছুই মনে নেই।’’
মঙ্গলবার রাতে এ নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ ‘ভাইরাল’ হয়। যেখানে একজন দাবি করেন, বিদ্যালয়ের নির্মীয়মাণ নতুন লিফটের কাজের জন্য বের হয়ে থাকা একটি প্লাইউডে লেগেই জখম হয়েছে ওই ছাত্র। যদিও এ বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার পরে সার্থকের বাবা রাকেশকে ফোনে বিষয়টি জানান বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রাকেশ এসে দেখেন, ছেলের বাঁ চোখ অনেকটা ফুলেছে। দ্রুত শেওড়াফুলির একটি বেসরকারি চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যান। রাকেশ জানান, ছেলের বাঁ চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। ওষুধ দেওয়া ছাড়াও কয়েকটি পরীক্ষা করতে বলেছেন।
বাড়ির লোকের অপেক্ষায় ছেলেটিকে বসিয়ে না রেখে সে দিন তখনই হাসপাতাল বা কোনও চিকিৎসকের চেম্বারে কেন ছেলেটিকে নিয়ে যাওয়া হল না, সেই প্রশ্ন তুলে মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ বিদ্যালয়ের গেটের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন শতাধিক অভিভাবক। কর্তৃপক্ষ কথা বলতে অস্বীকার করায় নিরাপত্তাকর্মীদের সরিয়ে তাঁরা ভিতরে ঢুকে পড়েন। ঘটনার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ দেখানোর দাবি জানান। তাঁদের দাবি, সংশ্লিষ্ট জায়গার সিসিক্যামেরা খারাপ বলে জানানো হয়। নানা বিষয়ে স্কুলের গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। অভিভাবকদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান অধ্যক্ষা।
রাকেশ বলেন, ‘‘বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ন্যূনতম সহানুভূতি না দেখিয়ে, প্রশ্ন করায় অভিভাবকদেরই উল্টে দোষারোপ করছেন।’’ রাকেশের স্ত্রী অনিতা বলেন, ‘‘যে কোনও ভাবেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু প্রাথমিক চিকিৎসা কেন করানো হবে না! অধ্যক্ষা বলেছেন, ছেলেরচিকিৎসার দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু লিখিত দেবেন না।’’