কেন্দ্রের কাছ থেকে বাহিনী পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে নিরাপত্তার ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে কাল, শনিবার স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়।
বিরোধী শিবির তো বটেই, খোদ রাজ্য নির্বাচন কমিশনার বারে বারেই বলে আসছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া শান্তিতে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। প্রথম দিকে আধাসেনা মোতায়েনের দাবি উড়িয়ে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। পরে তারাও বাহিনী চেয়েছে কেন্দ্রের কাছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পুরভোটের নিরাপত্তায় কোনও ভাবেই বিশেষ বাহিনীর ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জনবাবু বৃহস্পতিবারেও বলেন, ‘‘ভোটারদের মনে আস্থা বাড়ানোর জন্যই কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা জরুরি।’’ আধাসেনা না-পাওয়ার বিষয়টি যে তাঁদেরও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে, নির্বাচন কমিশনারের এ দিনের বক্তব্যে সেটা পরিষ্কার।
এই অবস্থায় সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, কালকের বৈঠকে মূলত সেই বিষয়েই রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে কমিশন সূত্রের খবর। নির্বিঘ্ন নির্বাচনের জন্য রাজ্য সরকার কী ভাবছে, তা জানতে চাইবে কমিশন। একই সঙ্গে ভোট ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এখনও পর্যন্ত সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলার যে-অভিযোগ করেছে, তার ভিত্তিতে প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিয়েছে, কমিশনের তরফে তা-ও জানতে চাওয়া হবে।
পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামাতে আইনের সাহায্য নেওয়ার চিন্তাও ছিল। কিন্তু এই ব্যাপারে আদালতে যাওয়ার সম্ভাবনা যে আর নেই, এ দিন তা স্পষ্ট করে দেন সুশান্তবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আমি ইতিমধ্যেই আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েছি। কমিশনের আইনজীবী জানিয়ে দিয়েছেন, এখন কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে মামলা করে কোনও লাভ নেই।’’
কলকাতা ও বিভিন্ন জেলার পুরভোট নিয়ে পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক শান্তনু বসুর অফিসে একটি বৈঠক হয়। লালবাজার সূত্রের খবর, ১৮ এপ্রিল কলকাতায় পুরভোটের জন্য রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে কলকাতা পুলিশকে পাঁচ হাজার কনস্টেবল, ২০০ অ্যাসিন্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর এবং ২০ জন ইনস্পেক্টর দেওয়া হবে বলে বৈঠকে স্থির হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী না-পেলেও এই অতিরিক্ত বাহিনী মিললে ভোটে অনেকটাই সুবিধা হবে বলে মনে করছেন লালবাজারের কর্তারা। কলকাতার ৭৮৬টি বুথকে ‘স্পর্শকাতর’ চিহ্নিত করা হয়েছে। ৫৪১টি বুথ ‘অতি-স্পর্শকাতর’। ওই সব বুথেই ভিডিও ক্যামেরা এবং মাইক্রো-অবজার্ভারের ব্যবস্থা থাকবে। যাদবপুরের ডেপুটি কমিশনারের অফিস, আলিপুরের বডিগার্ড লাইন এবং প্রগতি ময়দান থানায় তিনটি কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় থাকবে স্যাটেলাইট কন্ট্রোল রুম। শহর জুড়ে প্রায় ৩০০ পুলিশ পিকেটের বন্দোবস্ত হচ্ছে। যে-কোনও ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামলাতে থাকবে ফ্লাইং (ভ্রাম্যমাণ) রেডিও স্কোয়াড ও পর্যাপ্ত পুলিশ।
নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে মাইক-জট নিয়েও চিন্তিত কমিশন। আজ, শুক্রবার তারা পরিবেশ আদালতকে জানাবে, কী পরিস্থিতিতে ভোটের প্রচারে মাইক বাজানোর নির্দেশ দিতে হয়েছে। আগেই এ বিষয়ে কমিশনের বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দিয়েছিল ওই আদালত।