Bakibur Rahaman

বাকিবুর এত জমি কিনলেন কোন ‘মন্ত্রী-বলে’

বাকিবুর ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, নামে-বেনামে দেগঙ্গা, আমডাঙা, বাদুড়িয়া, অশোকনগর, হাবড়ায় পাঁচশো বিঘারও বেশি জমি কিনেছিলেন তিনি।

Advertisement

ঋষি চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৩০
Share:

বাকিবুর রহমান। —ফাইল চিত্র।

দুর্নীতি যদি হয়েই থাকে, তা হলে সেই বিপুল পরিমাণ কালো টাকা গেল কোথায়? ইডি-র তদন্তে এখন প্রধান সূচিমুখ এটিই। সেই সূত্রেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা খুঁজে দেখছেন, এই দুর্নীতির পিছনে কারা রয়েছেন? বাকিবুর রহমান যদি অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত হন, তা হলে তাঁর পিছনে কোন কোন প্রভাবশালী ছিলেন? যে প্রভাবশালীদের মদতে তিনি জেলায় জেলায় জমি কিনেছিলেন বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি। সেই সূত্রেই বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও তাঁর পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও তদন্তকারী সংস্থার আতশকাচের তলায়।

Advertisement

তদন্তকারীদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিপুল পরিমাণ জমি কেনা কার্যত নেশায় পরিণত হয়েছিল বাকিবুরের। বাকিবুর ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের নামে চালকল, গমকল, গুদাম, হাসপাতাল, রিসর্ট তৈরি করা হয়েছিল বলেও নানা সূত্রে খবর আসছে। বিরোধীরা সেই নিয়ে দাবিও করছেন। তবে এখনও এই নিয়ে প্রামাণ্য তথ্য আসেনি তদন্তকারীদের হাতে। তাঁরা খুঁজে দেখছেন, এই সবের সঙ্গে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের যোগ কতটা।

বাকিবুর ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, নামে-বেনামে দেগঙ্গা, আমডাঙা, বাদুড়িয়া, অশোকনগর, হাবড়ায় পাঁচশো বিঘারও বেশি জমি কিনেছিলেন তিনি। সেই সব সূত্রের দাবি, ‘উপরমহলে’ চেনাজানা আছে বলে বাকিবুর ও তাঁর লোকজনকে বিশেষ ঘাঁটাত না পুলিশ-প্রশাসন। পঞ্চায়েত ও পুরসভার সদস্যদের দিয়েও ‘প্রভাব খাটানোর’ কাজ চলত বলে অভিযোগ। কিছু ক্ষেত্রে জমিজমায় বাকিবুরের নাম সরাসরি পাওয়া যাচ্ছে বলে একটি সূত্রের দাবি। জ্যোতিপ্রিয়ের এক ঘনিষ্ঠের দেওয়া নথিতে উল্লেখ আছে, আমডাঙার আধাটা পঞ্চায়েতের দাদপুর এলাকায় গৌড়বঙ্গ রোডের ধারে সাধনপুর মৌজায় সাড়ে সাত একর জমির মালিকানায় নাম আছে বাকিবুর রহমানের। বেশ কিছু জমি পাঁচিল দিয়ে ঘিরে রাখা হলেও সেখানে কোনও নির্মাণ হয়নি।

Advertisement

বাসিন্দাদের অভিযোগ, ফুড কর্পোরেশনের গোডাউন তৈরির নাম করে কম দামে এই বিপুলপরিমাণ জমি কিনেছিলেন বাকিবুর। স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান আলি বলেন, ‘‘এই জমির পাশে আমাদেরও জমি রয়েছে। এখানে যাঁরা আসতেন, তাঁদের কাছে শুনেছি, এখানে না কি চালকল হবে, আটার প্যাকেট তৈরির কাজ হবে। স্থানীয়দের কর্মসংস্থান হবে। তার পর দেখলাম, মাটি দিয়ে জমি ভরাট করা হল। পরে শুনলাম চালকল হবে না।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কত টাকা থাকলে তবে এত জমি কিনে বছরের পর বছর ধরে ফেলে রাখা যায়!’’ বাদুড়িয়া পুর এলাকাতেওবাকিবুরের প্রায় ১৫ বিঘা জমির সন্ধান মিলেছে বলে একটি সূত্রের দাবি। এই জমি কেনা সূত্রে এমনও কথা শোনা গিয়েছে যে, প্রভাব খাটিয়ে কম দামে জমি কেনার ব্যাপারে কোনও প্রভাবশালীর (হয়তো বা কোনও মন্ত্রীর) ‘সহায়তা’ পেয়েছিলেন বাকিবুর। শুধু তাই নয়, এই সব কাজে যে সব জনপ্রতিনিধি ‘সাহায্য’ করেছিলেন বাকিবুরকে, শোনা যায়, তাঁরা পরের বিভিন্ন ভোটে ‘সহজে’ টিকিটও পেয়েছিলেন।

পাশাপাশি, ২০০১ সালের পর থেকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় তৃণমূলের ‘মুখ’ হয়ে উঠেছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। নানা সময়ে বিভিন্ন ভোটে ‘বালু’দার (জ্যোতিপ্রিয়ের ডাকনাম) লোকজনই বেশির ভাগ টিকিট পেয়েছিলেন বলে দলের একটি সূত্রের খবর। এ ভাবেই পুরসভা, পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদ এলাকায় তাঁর ‘নেটওয়ার্ক’ ছড়িয়ে পড়েছিল। বহু চেয়ারম্যান, পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, কর্মাধ্যক্ষ পদে বালুদার ঘনিষ্ঠরাই এক সময়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন।

এখানে এসেই তদন্তকারীরা দু’টি সূত্রকে যুক্ত করার চেষ্টা করছেন। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির প্রশ্নকে সামনে রেখেই চলছে সেই তদন্ত। সূত্র জোড়া লেগে গেলেই হয়তো জানা যাবে, আমজনতার পাত থেকে লুটের মূল মাথা কারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement