অসুস্থ অনিকেত এবং অনুষ্টুপকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। ছবি: সংগৃহীত।
ধর্মতলার অনশনমঞ্চে অসুস্থ হয়ে একে একে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চার জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, পুলস্ত্য আচার্য এবং তনয়া পাঁজা। উত্তরবঙ্গে চিকিৎসাধীন ‘আমরণ অনশন’রত অলোক বর্মাও। তাঁদের শারীরিক অবস্থা এখন কেমন, মঙ্গলবার তা জানালেন চিকিৎসকেরা।
‘আমরণ অনশন’-এর চার দিনের মাথায় প্রথমে অসুস্থ হয়ে পড়েন আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে আরজি করের সিসিইউতে ভর্তি করানো হয়। গড়া হয় মেডিক্যাল বোর্ড। গত কয়েক দিনে তাঁর শারীরিক অবস্থার খানিক উন্নতি হয়েছে। তবে সঙ্কট কাটেনি। এখনও বেশ দুর্বল অনিকেত। সোমবার তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য ফের মেডিক্যাল বোর্ড বসে। বেশ কিছু পরীক্ষাও করা হয়েছে।
অনিকেতের পর শনিবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়কেও। মঙ্গলবার চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অনুষ্টুপের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। কালো মল আর হচ্ছে না। এখন সংজ্ঞা রয়েছে তাঁর। তবে আশঙ্কা কাটলেও কিছুতেই খেতে রাজি হননি অনুষ্টুপ। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাঁকে এইচডিইউ কিংবা কেবিনে স্থানান্তরিত করার কথাও ভাবা হবে।
রবিবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পুলস্ত্য আচার্য এখনও সঙ্কটে থাকলেও আপাতত স্থিতিশীল। সোমবার এমনটাই জানান নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের (এনআরএস) মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান। অনিকেত, অনুষ্টুপের পর রবিবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সন্ধ্যা থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়। সঙ্গে বমি। তার পরেই তাঁকে এনআরএসে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুলস্ত্যের চিকিৎসায় পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিমও গঠন করা হয়।
সোমবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তনয়া পাঁজাও। সোমবার সকাল থেকেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। তবু ‘আমরণ অনশন’ চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এর পর রাতে অনশনমঞ্চের পাশের শৌচালয়ে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ওই জুনিয়র ডাক্তার। তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সে সময় তাঁর রক্তচাপ কমে ৮৬/৬২-এ নেমে গিয়েছিল। মঙ্গলবার চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তনয়ার অবস্থা এখনও সঙ্কটজনক। শরীরে জলশূন্যতা কমাতে ফ্লুইড দেওয়া হয়েছে। আগের চেয়ে সামান্য বেড়েছে রক্তে শর্করার মাত্রাও। তবে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিক হতে এখনও সময় লাগবে। পেট ব্যথা কমলেও এখনও বেশ দুর্বল তিনি। আপাতত চিকিৎসাধীন থাকতে হবে তাঁকেও।
অন্য দিকে, শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অনশনমঞ্চ থেকে জুনিয়র ডাক্তার অলোক বর্মাকে শুক্রবারই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তাঁর অবস্থা এখন স্থিতিশীল। রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে তাঁর।
১০ দফা দাবিতে গত ৫ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টা থেকে ধর্মতলায় ‘আমরণ অনশন’ শুরু করেন কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের ছয় জুনিয়র ডাক্তার। তাঁরা হলেন তনয়া পাঁজা, স্নিগ্ধা হাজরা, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, অর্ণব মুখোপাধ্যায় এবং পুলস্ত্য আচার্য। গত রবিবার অনশনে যোগ দেন আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতোও। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। উত্তরবঙ্গ ডেন্টাল কলেজের দুই ডাক্তার সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অলোক বর্মাও অনশন শুরু করেছিলেন। শুক্রবার অসুস্থ হয়ে পড়েন অলোক। তাঁকেও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শনিবার রাতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কলকাতা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয় অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়কে। পেটে যন্ত্রণা হচ্ছিল তাঁর। রবিবার অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন হন পুলস্ত্য। সোমবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তনয়াও। এর মাঝে শুক্রবার রাতে নতুন করে অনশনে যোগ দিয়েছেন আরও দু’জন। তাঁরা হলেন পরিচয় পণ্ডা এবং আলোলিকা ঘোড়ুই। উত্তরবঙ্গেও অলোকের জায়গায় নতুন করে অনশনে বসেছেন সন্দীপ মণ্ডল। অর্থাৎ, এই মুহূর্তে ধর্মতলার মঞ্চে অনশনরত চিকিৎসকের সংখ্যা পাঁচ।