—প্রতীকী ছবি।
বছরের গোড়াতেই যারা ‘বঙ্গ কুম্ভমেলা’র আয়োজন করেছিল, সেই দুই সংগঠন-সহ মোট তিনটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনই আগামী ২৪ ডিসেম্বর ব্রিগেডে লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠের আয়োজন করেছে।
গত বছর ৫ ডিসেম্বর মায়াপুর ইস্কনে পাঁচ হাজার কণ্ঠে গীতাপাঠে এর একটি ছোট মহড়াও হয়ে গিয়েছে, জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। তাঁদের দাবি, পুরোটাই সাধুসন্তদের ব্যাপার, এর মধ্যে রাজনীতি নেই। যদিও বঙ্গ কুম্ভের মতো এ বারেও বিজেপি নেতাদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো।
গত ১০-১৪ ফেব্রুয়ারি ভাগীরথীর দুই তীরে হুগলির ত্রিবেণী এবং নদিয়ার কল্যাণীতে মাঝেরচর এলাকায় ‘বঙ্গ কুম্ভমেলা’ করা হয়েছিল। নানা বিতর্ক সত্ত্বেও সেই মেলায় বিপুল জনসমাগম হয়। বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার ও শুভেন্দু অধিকারীতো গিয়েছেনই, তৃণমূল নেতারাও সেই মেলার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে নেমে পড়েছিলেন।
সেই মেলার দুই পুরোধা সংগঠন অখিল ভারতীয় সংস্কৃত পরিষদ ও সনাতন সংস্কৃতি সংসদের সঙ্গে এ বারের আয়োজনে যোগ দিয়েছে মতিলাল ভারততীর্থ সেবা মিশন আশ্রম। এদের সঙ্গে রয়েছে সাধুসন্তদের বিভিন্ন সংগঠন ও আখড়া। অখিল ভারতীয় সংস্কৃত পরিষদের তথা লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠের আয়োজক কমিটির মুখ্য রাজ্য সংগঠক মানস ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, ব্রিগেডের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের ১০ টাকা এবং বাকিদের ২০ টাকা প্রবেশমূল্য ধার্য করা হয়েছে। তাঁর দাবি, “এখনও পর্যন্ত রাজ্যে দেড় লক্ষের বেশি মানুষ রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেছেন। ব্রিগেডের গীতাপাঠে চার থেকে পাঁচ লক্ষ মানুষের সমাবেশ ঘটতে চলেছে।”
আয়োজকেরা জানাচ্ছেন, ব্রিগেডে অনুষ্ঠানমঞ্চের সভাপতি হবেন দ্বারকাপীঠের শঙ্করাচার্য স্বামী সদানন্দ সরস্বতী মহারাজ। রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় ৪৮৫টি প্রস্তুতি বৈঠক হয়ে গিয়েছে। সমবেত কণ্ঠে গীতাপাঠের সুর-তাল মেলানোর তালিম দিতে বিভিন্ন জেলায় আশ্রম ও স্কুলে মহড়া চলছে। প্রত্যেক জেলাতেই হাজারখানেক কার্যকর্তা কাজ করছেন। বাংলা থেকে প্রায় এক হাজার সাধুকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। আপাতত এক কোটি টাকার উপর বাজেট ধরা হয়েছে।
তবে হিন্দুত্ববাদী এই কর্মসূচিতে সকলকেই যুক্ত করার কথা বলছেন আয়োজকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে গীতাপাঠের জন্য বিশিষ্ট অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তৃণমূলের সমস্ত সাংসদ, বিধায়ক তো বটেই, রাজ্যের সব রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। আইএসএফের নওশাদ সিদ্দিকীও বাদ যাবেন না। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিও আমন্ত্রিত।
বিজেপি-বিরোধী দলগুলি অবশ্য বলছে, লোকসভা নির্বাচনের আগে হিন্দুত্বের তাস খেলাই এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য। তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশীষ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, “বিজেপিকে ক্ষমতায় ফেরানোর জন্য হিন্দুত্ববাদে সুড়সুড়ি দেওয়া হচ্ছে।” তবে আয়োজকদের তরফে মানস ভট্টাচার্যের দাবি, “এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই।” তা হলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলেন কেন? মানসের দাবি, “যে হেতু আমরা কেউ সে ভাবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর (পিএমও) চিনি না, দিল্লি থেকে কেউ সুকান্ত মজুমদারকে দায়িত্ব দিয়েছিল, আমাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
আয়োজক কমিটি তথা সনাতন সংস্কৃতি সংসদের সভাপতি প্রদীপ্তানন্দ কিন্তু জানাচ্ছেন, রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে উপদেষ্টা কমিটিতে রাখা হয়েছে। যে শুভেন্দু ইতিমধ্যে ফেসবুক পোস্টে মুখ্যমন্ত্রীকে ডাকার খবর কার্যত ‘জাল’ (ফেক) বলে দেগে দিয়ে ঘোষণা করেছেন, “গীতাপাঠের মহোৎসবে কোনও সনাতন-বিরোধীর স্থান নেই।” মানসের দাবি, উপদেষ্টা কমিটিতে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নেই। আর প্রদীপ্তানন্দ বলছেন, “পোস্টটা আমি দেখিনি। তবে এমনিতেই সনাতনপন্থার বিরোধীরা ওখানে আসবে না।”
তবে এ দিন শুভেন্দু আবার বলেন, ‘‘পুরোটাই সন্ত সমাজ করছে। কাকে ডাকবেন আর কাকে ডাকবেন না, সেটা সম্পূর্ণ তাঁদের বিষয়। এটা নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের আগ বাড়িয়ে কিছু বলার নেই।’’