অমিত শাহ- ফাইল চিত্র।
সব কিছু ঠিক ভাবে চললে মহালয়ার দিন শহরে আসার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। ওই দিন শহরের বিখ্যাত পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো উদ্বোধন করার কথা তাঁর। ওই পুজোর অন্যতম কর্তা হলেন বিজেপি নেতা তথা কলকাতা পুরসভার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সজল ঘোষ। উল্লেখ্য, সজল ঘোষ বিজেপিতে যোগদান করার আগে তৃণমূল করতেন। সজলের বাবা প্রদীপ ঘোষও এক সময় কংগ্রেসের উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার এবার তাঁদের পুজোয় স্বাধীনতার ৭৫ বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মসূচি ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’কে তুলে ধরবে।
২০২০ সালেও এক বার কলকাতায় পুজো উদ্ধোধনে এসেছিলেন অমিত শাহ। সে বার সল্টলেক বিজে ব্লকের একটি পুজোর উদ্বোধন করেন তিনি। সে বার অবশ্য রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্যরকম ছিল। লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টি আসনে জয়লাভ করেছিল পদ্মশিবির। তার উপর একের পর এক তৃণমূল নেতা সে সময় দল ছেড়ে হাতে পদ্ম পতাকা তুলে নিচ্ছিলেন। তাই, দুর্গাপুজোকেন্দ্রিক জনসংযোগে তৃণমূলের একচ্ছত্র ‘আধিপত্যে’ ভাগ বসাতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সে কাজে বিশেষ সফল হয়নি তারা। তবে অমিত শাহের পুজো উদ্বোধন করাকে কেন্দ্র করে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বেশ শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। তাঁর সামনে স্লোগান উঠেছিল ‘জয় শ্রীরাম’। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশে কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষদের সঙ্গেই দেখা গিয়েছিল তৃণমূলত্যাগী মুকুল রায় এবং সব্যসাচী দত্তকে।
তিন বছর পর অমিত শাহ যখন ফের কলকাতার দুর্গাপুজো উদ্বোধনে আসছেন, তখন রাজনৈতিক পটচিত্রে অনেকটাই বদলে গিয়েছে। ২০২১-এ মরিয়া চেষ্টা সত্ত্বেও ‘বঙ্গ-বিজয়’ অধরাই থেকে গিয়েছে রাজ্য বিজেপির। সেই সময় শাহ নিজে অনেকবার রাজ্যে এসে দলীয় কর্মীদের উদ্দীপ্ত করে ২০০ আসন জয়ের দাবি করলেও, বিজেপিকে থেমে যেতে হয়েছে ৭৫ আসনের গণ্ডিতেই। তিন বছর আগে শাহের সঙ্গে পুজো উদ্বোধনে যাঁদের দেখা গিয়েছিল, তাঁদের মধ্যে মুকুল রায় আর সব্যসাচী দত্ত ফের তৃণমূলে ফিরে এসেছেন। এই আবহে ফের পুজো উদ্বোধনে আসতে চলেছেন শাহ। রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর, কলকাতায় পুজো উদ্বোধনে আসতে পারেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও। তিনি সল্টলেকের একটি পুজো উদ্বোধনে উপস্থিত থাকতে পারেন। এ বার সেই পুজোর থিম অযোধ্যার রামমন্দির। অবশ্য উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে এই বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শাহকে কলকাতার পুজো উদ্বোধনে আনার জন্য রাজ্য বিজেপির অন্দরে কিছু দিন ধরেই তোড়জোড় চলছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে নিয়ম মেনে আনুষ্ঠানিক আবেদনপত্রও পাঠানো হয়েছিল। রাজ্য বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছিল, শাহের মন্ত্রকের তরফে এই বিষয়ে মৌখিক সম্মতি জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিনে নিয়োগ দুর্নীতি-সহ একাধিক বিষয়ে রাজ্যের শাসকদলের অস্বস্তি বেড়েছে। জেলবন্দি রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এই প্রেক্ষিতে রাজ্যের শাসকদলের উপর চাপ বাড়াতে চাইছে বিজেপি। সম্প্রতি কলকাতার দুর্গাপুজোকে ‘আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে’র স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। সেই স্বীকৃতির কৃতিত্ব নিয়েও দড়ি টানাটানি চলেছে বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার এবং তৃণমূল শাসিত রাজ্য সরকারের মধ্যে। ইতিমধ্যেই ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানিয়ে কলকাতায় বর্ণাঢ্য পদযাত্রা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি-সহ বিরোধীদের একাংশের অভিযোগ ছিল দুর্গাপুজো নিয়ে প্রচার এবং কৃতিত্বের সবটুকুই নিয়ে নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বার শাহের মতো ‘হেভিওয়েট’কে পুজোর ময়দানে এনে তারই পাল্টা দিতে চলেছে রাজ্য বিজেপি।