আগামী বছরে শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড চালু হতে পারে বলে সূত্রের খবর। —ফাইল চিত্র।
শুধুমাত্র প্রথাগত পড়াশোনা নয়। প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের সার্বিক উন্নতি কেমন হচ্ছে, তা দেখার জন্য গত বছরই স্কুলগুলিকে হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড তৈরি করার কথা বলেছিল শিক্ষা দফতর। কিন্তু নানা জটিলতায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। সূত্রের খবর, এ বছর ফের সেই কাজ করতে চলেছে শিক্ষা দফতর। এর জন্য প্রতিটি জেলার স্কুলপরিদর্শকদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করছে তারা।
উল্লেখ্য, স্কুলের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নে নম্বর দেওয়ার পাশাপাশিএক জন পড়ুয়ার বৌদ্ধিক বিকাশ কতটা হচ্ছে, সেটাও যাচাই করতে হবে শিক্ষকদের। সেই মতামত তাঁদের লিখতে হবে হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ডে। কোনও পড়ুয়া সহপাঠীরসঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে পারছে কিনা, সে কতটা মানসিক চাপ নিতে পারে, তার সাংগঠনিক, মত প্রকাশ এবং কথোপকথনের দক্ষতা— সবই জানা যাবে হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড থেকে। সেই সঙ্গে এক জন পড়ুয়ার পছন্দের বিষয় থেকে শুরু করে সেকী নিয়ে উদ্বিগ্ন হয় বেশি, তার সৃজনশীল দক্ষতাই বা কতটা, সেই মূল্যায়নও শিক্ষকদের করতে হবে। এক কথায়, প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনারপাশাপাশি এক জন পড়ুয়ার অন্যান্য দিকে বিকাশ কতটা হয়েছে, তা-ই দেখা হবে এই হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ডে।
গত বছরের জুন মাসে হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড করার কথা শিক্ষা দফতর বললেও জুলাই মাসে তারা সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেয়। কারণ, শিক্ষাবর্ষের মাঝামাঝি সময়ে এই কাজ করতে গিয়ে অসুবিধা হয় এবং হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ডে যে পর্যায়ক্রমিক নম্বর বিভাজন করা হয়েছিল, তাতে উঠে আসেবে কিছু অসঙ্গতি। এ বার তাই আগামী বছরে শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই এই রিপোর্ট কার্ড চালু হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
তবে, শিক্ষকদের একাংশের মতে, হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ডের হার্ড কপি না দিয়ে তা আপলোড করা হোক বাংলার শিক্ষা পোর্টালে। না হলে এত বিপুল সংখ্যকমূল্যায়নপত্র সংরক্ষণ করা স্কুলগুলির পক্ষে প্রবল সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। ‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘এই মূল্যায়নপত্র ৩২ পাতার। প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবপড়ুয়ার সেই মূল্যায়নপত্র আট বছর ধরে স্কুলে রাখতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তা ছাড়া, পড়ুয়া ও শিক্ষকদের বার বার ব্যবহারে মূল্যায়নপত্র ছিঁড়ে যেতে পারে। তার চেয়েও বড় কথা, চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণিতে অনেক পড়ুয়া স্কুল বদল করে। সেই সময়ে এই মূল্যায়নপত্র হারিয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে যে উদ্দেশ্যে এত কিছু করা, সেই উদ্দেশ্যই পূরণ হবে না।“
সৌদীপ্তের মতে, এই মূল্যায়নপত্র বাংলার শিক্ষা পোর্টালে আপলোড করার ব্যবস্থা করা হোক। তা হলে পড়ুয়া এবং শিক্ষক যে কোনও সময়ে সেটি দেখতে পাবেন এবং দরকারে প্রিন্ট আউটও নেওয়া যাবে। সেই সঙ্গে, এত বিপুল সংখ্যক মূল্যায়নপত্র ছাপার খরচও সাশ্রয় হবে।
‘শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীর মতে, “ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক বিকাশ তুলে ধরার জন্য যথেষ্ট সময় দিতে হবে শিক্ষকদের। এর জন্য সর্বাগ্রে দরকার পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী এবং উপযুক্ত পরিকাঠামো। সেটাই তো নেই। তাই হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ডের ঠিক মূল্যায়ন করতে গেলে শিক্ষক নিয়োগও অবিলম্বে জরুরি।’’