প্রতীকী ছবি।
ছাত্রছাত্রীরা ভুল করলে বা দুষ্টুমি করলে শাস্তি দেন তিনি। এমনকি, কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকা অনিয়ম করলে প্রতিবিধানের দায়িত্ব তাঁরই। দুই সহকারী শিক্ষকের বদলিতে বাধা সৃষ্টি করায় সেই প্রধান শিক্ষককেই শাস্তি দিল কলকাতা হাই কোর্ট।
দুই শিক্ষককে নিয়ম অনুযায়ী ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) বা অনাপত্তি শংসাপত্র না-দেওয়া এবং সেই বিষয়ে আদালতে ভুল তথ্য পেশের অভিযোগ ওঠায় হাই কোর্টের নির্দেশ, দক্ষিণ দিনাজপুরের বড়কইল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সাত দিন নিজের স্কুলে ঢুকতে পারবেন না। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতিকেও এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে দুই শিক্ষকের দু’টি মামলায় প্রধান শিক্ষকের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশ, স্কুলের চাবি আপাতত ডিআই বা জেলা স্কুল পরিদর্শকের হাতে তুলে দিতে হবে।
মামলাকারীদের আইনজীবী শুভ্রাংশু পাণ্ডা জানান, আদালতের আরও নির্দেশ, ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এ ছাড়াও প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতিকে নিজেদের সম্পত্তির হিসেব ডিআই মারফত হলফনামার আকারে আদালতে পেশ করতে হবে। মামলাকারী দুই শিক্ষককে এ দিনই এনওসি দিতে নির্দেশ দেয় কোর্ট। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই এনওসি উৎসশ্রী পোর্টালে আপলোড করতে হবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ৮ মার্চ।
জীববিজ্ঞানের শিক্ষক তাপস মণ্ডল এবং ইংরেজির শিক্ষক মোস্তাফিজুর মোল্লার অভিযোগ, উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে বদলির জন্য আবেদন করা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষক এবং স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি তাঁদের এনওসি দেননি। অনুরোধ-আবেদনে কাজ না-হওয়ায় তাঁরা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। অভিযোগ, সেই মামলায় প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি আদালতে যে-হলফনামা পেশ করেন, তাতে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিল।
এ দিন সকাল ১১টা থেকে সওয়া ৩টে পর্যন্ত শুনানি চলে। বিচারপতিকে মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে, এই ধরনের প্রধান শিক্ষকেরা অযোগ্য। এঁদের পদাবনতি হওয়া উচিত।উচ্চ আদালত সূত্রের খবর, জীবনে তিনি এমন প্রধান শিক্ষক দেখেননি বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি। হাই কোর্টে দাঁড়িয়ে এক জন প্রধান শিক্ষক কী ভাবে অসত্য কথা বলেন, তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছে কোর্ট।
উৎসশ্রী পোর্টাল মারফত বদলির আবেদন করলেও অনেক ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট স্কুল-কর্তৃপক্ষ এনওসি দিচ্ছেন না বলে শিক্ষক মহলে আক্ষেপ-অভিযোগ রয়েছে। এমনকি, কোথাও কোথাও এনওসি-র জন্য আর্থিক লেনদেন হয়েছে ও হচ্ছে বলেও খবর। এ দিন হাই কোর্টেও সেই প্রসঙ্গ ওঠে। আইনজীবী শিবিরের অনেকের পর্যবেক্ষণ, সম্ভবত সেই কারণেই প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতির সম্পত্তির হিসেব তলব করেছে কোর্ট।