আলোয় সেজেছে কপিল মুনির মন্দির। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
ভাষা বদলে বার বার ঘোষণা হচ্ছে মেলার মাইকে। কখনও হারিয়ে যাওয়া আট বছরের শিশুর বাবা-মাকে মন্দির সংলগ্ন এলাকায় আসতে বলা হচ্ছে। কখনও ভিন্ রাজ্য থেকে আগত প্রৌঢ়ের অভিভাবকের খোঁজ চলছে। অবাক দোকানি ঘাড় তুলে বললেন, ‘‘স্নানের আগেই এই অবস্থা। এর পর যে কী হবে?’’
এ বছর গঙ্গাসাগর মেলায় ভিড় ছাপিয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস মিলেছিল প্রশাসনের সব স্তর থেকেই। প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে এসে রেকর্ড ভিড়ের আভাস শোনা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেও। সেই ইঙ্গিত মালুম হল বৃহস্পতিবারেই। কচুবেড়িয়ার ঘাট থেকে মেলার রাস্তার দখল নিয়েছিলেন পুণ্যার্থীরা। কিলোমিটার দুই আগেই গাড়ি থেকে নেমে লটবহর মাথায় হেঁটেই মেলার পথ ধরেছেন অনেকে। কোচবিহার থেকে আসা পুণ্যার্থীর কথায়, ‘‘পার্কিং-এ ঢোকার জন্য বাস দাঁড়িয়ে। আর নড়ছে না।’’
এরই মধ্যে এ দিন গঙ্গাসাগরে হরিয়ানা থেকে আসা ধরম পাল (৫৮) নামে এক পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়। বাস থেকে নেমে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে নারায়ণপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। চিকিৎসকেরা জানান, মৃত্যু হয়েছে। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু বলে অনুমান চিকিৎসকদের। দুপুরে উত্তরপ্রদেশের চন্দ্রাবতী বর্মা মেলায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে হেলিকপ্টারে কলকাতায় পাঠিয়ে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
কপিল মুনির মন্দিরে পুজোর লাইনের ভিড় সামলাতে কার্যত হিমশিম অবস্থা পুলিশকর্মীদের। ব্যারিকেড করে, বাঁশ দিয়ে ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। সমুদ্র স্নান সেরে অনেকেই পুজোর লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। দুপুরের দিকে সেই লাইন চলে যায় প্রায় সমুদ্রতট পর্যন্ত। উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা আরতি কুমারী বললেন, ‘‘সংক্রান্তির দিন কী যে হবে, বুঝতে পারছি না! ভিড় হবে ভেবেই আগেভাগে পুজোর লাইনে দাঁড়িয়েছি। সুযোগ মিললে সংক্রান্তির পুজো ছেলে-বৌমারা ও দিনই দেবে।’’
আনুষ্ঠানিক ভাবে মেলার সূচনা হয়ে গেলেও মকর সংক্রান্তির স্নানের আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে সমুদ্রতট পরিদর্শন করতে দেখা গেল জেলা প্রশাসনের কর্তাদের। বিকেলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঙ্গা আরতির আয়োজনও করা হয়েছিল। কপিল মুনির মন্দির এলাকা থেকে শোভাযাত্রা করে সাগরতটে গিয়ে সেই আরতি করা হয়।