কথায় কথায় জেলা থেকে কলকাতায় রোগী পাঠানো হলে বিপুল অর্থ খরচ করে জেলা স্তরে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরির অর্থ কী? প্রশ্ন তুলেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। এ বার ডেঙ্গিরোগী ‘রেফার’ বন্ধ করতেও নির্দেশিকা জারি করল স্বাস্থ্য ভবন।
গত বছর যে-সব অঞ্চলে ডেঙ্গি মারাত্মক আকার নিয়েছিল, তার মধ্যে ২১টি ব্লককে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেগঙ্গা, হাবড়া-১, হাবড়া-২, গাইঘাটা-সহ উত্তর ২৪ পরগনার আটটি ব্লক রয়েছে সেই তালিকায়। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, সম্প্রতি একটি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এই ২১টি ব্লকে কোনও রোগীর ডেঙ্গি সংক্রমণ ‘সিভিয়ার’ বা মারাত্মক পর্যায়ে না-গেলে তাঁকে জেলা হাসপাতাল বা কলকাতার সরকারি হাসপাতালে পাঠানোর প্রয়োজন নেই। ডেঙ্গি ধরা পড়ার পরে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই যেন চিকিৎসা হয়।
সরকারি হাসপাতালে ‘রেফার রোগ’ সারাতে গত বছর ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক বৈঠকে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতায় রোগী পাঠানোর হিড়িক দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রশ্ন তোলেন, জেলা স্তরে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ে তা হলে হলটা কী? তার পরেও রেফার-রোগ কমেনি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী এলে শহর বা সদরের হাসপাতালে পাঠানোটাই যেন দস্তুর! ডেঙ্গি সংক্রমণের ক্ষেত্রে সেই রোগের নিরাময় চায় স্বাস্থ্য ভবন। যদিও তা নিয়ে ভিন্ন মতও রয়েছে।
শুক্রবার ন্যাশনাল আরবান হেলথ মিশন (এনইউএইচএম)-এর এক বৈঠকে উত্তর ২৪ পরগনার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নতুন নির্দেশিকার কথা জানানো হয়। তা শুনে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একটি বড় অংশের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা কী ভাবে সম্ভব!’’
স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশের ব্যাখ্যা, গত বছর গ্রামাঞ্চলের প্রচুর রোগী শহর ও শহরতলির হাসপাতালে ভিড় করেছিলেন। সংবাদমাধ্যমে সেই ছবি বেরোনোয় অস্বস্তি বেড়েছিল রাজ্য সরকারের। তা আটকাতেই এই পদক্ষেপ। তবে নির্দেশিকার প্রেক্ষিত ব্যাখ্যা করে স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ডেঙ্গি ধরার পড়ার পরে ৯৯% মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। রোগীরা যদি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা পেয়ে বাড়ি ফেরেন, ক্ষতি কী! রোগীর কী হয়েছে, ব্লকগুলি বুঝতে পারত না বলেই রেফার করে দিত। তা যাতে না-হয়, সেই চেষ্টাই চলছে।’’ নির্দেশিকা রূপায়ণে ২১টি ব্লকে যন্ত্রপাতি-সহ পরিকাঠামো গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। ডেঙ্গি সংক্রমণ নির্ণয়ের পদ্ধতি ও চিকিৎসা সম্পর্কে এক দফা প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ব্লক স্তরে প্লেটলেট বা অণুচক্রিকা গণনার পাশাপাশি প্রয়োজনে অণুচক্রিকা সরবরাহেরও ব্যবস্থা করা হবে।’’
স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশের প্রশ্ন, শহরাঞ্চলেই এখনও ডেঙ্গি-ভীতি কাটানো যায়নি। সেখানে ব্লকের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যে ডেঙ্গি সংক্রমণের চিকিৎসা সম্ভব, রোগীর পরিবারকে সেটা বোঝাবে কে?
গত বছরের মতো ডেঙ্গি নিয়ে তথ্য চেপে দেওয়ার চেষ্টা যেন না হয়, তার জন্য রাজ্যকে সতর্ক করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রোগের জন্য তৃণমূল নেত্রী দায়ী, এমন কথা তো বিরোধীরা বলেনি! তা হলে রোগ স্বীকার করতে অসুবিধা কোথায়? ডেঙ্গি লিখলে কেন চিকিৎসকদের হেনস্থা করা হবে?’’ তাঁর অভিযোগ, অতীতে ডেঙ্গি লেখার দায়ে চিকিৎসকদের সরানো হয়েছে, আবার তাঁর পাশে দাঁড়ালে প্রতিবাদী চিকিৎসকদেরও হেনস্থা করা হয়েছে।