তিনশোরও বেশি অফিস রয়েছে বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা এমপিএস-এর। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের সব ক’টি অফিসই বন্ধ করে দিতে বলল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি সৌমিত্র পাল সোমবার রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলকে এই নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশি সূত্রের খবর, ওই অর্থ লগ্নি সংস্থার তিন শতাধিক অফিসের মধ্যে ঝাড়গ্রামের অফিস বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই পুলিশ-জেলার পুলিশ সুপারকে। লেক টাউনের অফিস বন্ধ করবেন বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার। গোটা প্রক্রিয়াটি দেখভাল করতে হবে ডিজিকে।
সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পরে রাজ্যের অন্যান্য বেসরকারি লগ্নি সংস্থার কারচুপিও ধরা পড়তে থাকে। এই অবস্থায় শুধু এমপিএস নয়, অন্যান্য লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধেও হাইকোর্ট এ দিন কিছু নির্দেশ দিয়েছে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, অর্থ লগ্নি সংস্থা রোজ ভ্যালির কোনও অ্যাকাউন্টই আগামী তিন মাস খোলা যাবে না। ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, ওই সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ না-হলে তখন এই বিষয়ে বিবেচনা করা যাবে। গত বছর হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া রোজ ভ্যালির সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেছিল ওই সংস্থা। তার ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে মামলার শুনানি শেষ হয়। এ দিন রায় দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
এমপিএসে বিনিয়োগ করে টাকা ফেরত না-পেয়ে ভাস্কর দাশগুপ্ত নামে এক আমানতকারী ২০১৩ সালে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁর আইনজীবী অরিন্দম দাস জানান, আবেদনে বলা হয়েছিল, এমপিএস যাতে বাজার থেকে টাকা তুলতে না-পারে, সেই জন্য সেবি (সিকিওরিটি এক্সচেঞ্জ বোর্ড) নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ২০১৩ সালে। হাইকোর্ট সে-বছরই নির্দেশ দিয়েছিল, এমপিএসের সব অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ রাখতে হবে। তা সত্ত্বেও এমপিএস বাজার থেকো টাকা তোলা বন্ধ করেনি বলে অভিযোগ বাদী পক্ষের। এমপিএসের আইনজীবী কিশোর দত্ত অবশ্য আদালতে দাবি করেন, বাজার থেকে টাকা তোলা বন্ধই আছে।
সেই দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ভাস্করবাবুর আইনজীবী অরিন্দমবাবু এ দিন এমপিএসের টাকা তোলার দু’টি রসিদ জমা দেন আদালতে। দেখা যায়, এমপিএস গ্রিনারি ডেভেলপারস লিমিটেড তাদের অ্যাগ্রো-বন্ডের জন্য প্রতীক মুখোপাধ্যায় ও অন্তরা দাশগুপ্ত নামে দু’জনের কাছ থেকে নগদে ২০০ করে টাকা তুলেছে। এবং ওই টাকা তোলা হয়েছে চলতি মার্চ মাসের ২ এবং ২৫ তারিখে। রাজ্য সরকারের আইনজীবী প্রণব দত্ত এ দিন আদালতে জানান, এমপিএসের বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত করছে সিবিআই-ও। ওই সংস্থার আর্থিক কেলেঙ্কারি অনেক বড়। সেবি-র আইনজীবী হীরক মিত্র অভিযোগ করেন, তাঁদের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বাজার থেকে টাকা তোলা বন্ধ করেনি এমপিএস। ওই সংস্থার কর্ণধার যে-রোলস রয়েস গাড়ি চড়েন, সেটিও নগদ টাকায় কেনা। তবে এমপিএস আদালতে দাবি করে, লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে।
এমপিএসের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে অভিযোগ দায়ের করেছে সেবি-ও। ওই লগ্নি সংস্থার কর্ণধার প্রমথনাথ মান্নাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সংস্থার অন্য ১৪ জন ডিরেক্টরের বিরুদ্ধেও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন আমানতকারীরা। রাজ্যের বিভিন্ন থানায় দায়ের হয় ১৬টি এফআইআর। তার মধ্যে চারটি এফআইআরের তদন্তভার নেয় সিবিআই। অন্যান্য এফআইআরের ভিত্তিতে তদন্ত করছে রাজ্য পুলিশ। সোমবার প্রমথবাবুকে বিধাননগরের এসিজেএম আদালতে হাজির করায় সিবিআই। বিচারক অপূর্বকুমার ঘোষ তাঁকে ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
এ দিন ঝাড়গ্রামের দিঘিশোলে এমপিএসের কৃষি খামার ও বাণিজ্যিক ভবনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাভাবিক কাজকর্ম চলছে। তবে পদস্থ কোনও আধিকারিক নেই। রিসর্টেও নেই কোনও কর্মী বা অফিসার। দিঘিশোলের প্রকল্প আধিকারিক তপন দাস বলেন, “এখন কৃষি খামারে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ১২৫ জন কর্মী রয়েছেন। কিছু উত্পাদন হচ্ছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিভাগের একটি অংশ চালু রয়েছে। মিনারেল ওয়াটার প্রকল্পটিও চালু। রিসর্ট খোলা রয়েছে। তবে লোকজন নেই।”
এ দিনই ব্যবসায়ী শান্তনু ঘোষকে দু’দফায় প্রায় পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর আর্থিক চুক্তি নিয়েই তাঁকে নানা প্রশ্ন করা হয়েছে বলে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর। তার পরে ওই ব্যবসায়ী যান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র দফতরেও। সেখানেও তাঁর আয় ও ব্যয় নিয়ে কিছু প্রশ্ন করেন তদন্তকারীরা।