হলদিয়ায় কাঠগড়ায় তৃণমূল

ধর্ষণে গ্রেফতার নেতা, চক্রান্তের নালিশ বামেদের

উপ-নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা হয়নি। তার আগেই তমলুক লোকসভা আসনের এই ভোট ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হল। আর তার মূলে একটি ধর্ষণের অভিযোগ। বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবতীকে ধর্ষণের অভিযোগে বুধবার গ্রেফতার করা হয়েছে সিপিএমের হলদিয়া শহর (দক্ষিণ) জোনাল কমিটির সম্পাদক শ্যামল মাইতিকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া ও তমলুক শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৭
Share:

হলদিয়া আদালতে সিপিএম নেতা শ্যামল মাইতি। — নিজস্ব চিত্র

উপ-নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা হয়নি। তার আগেই তমলুক লোকসভা আসনের এই ভোট ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হল। আর তার মূলে একটি ধর্ষণের অভিযোগ।

Advertisement

বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবতীকে ধর্ষণের অভিযোগে বুধবার গ্রেফতার করা হয়েছে সিপিএমের হলদিয়া শহর (দক্ষিণ) জোনাল কমিটির সম্পাদক শ্যামল মাইতিকে। তারপরই সরব বামেরা। তাদের অভিযোগ, তমলুক কেন্দ্রে উপ-নির্বাচনের আগে এ সব তৃণমূলের চক্রান্ত। পরিকল্পনা করেই দক্ষ সংগঠক শ্যামলবাবুকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে শাসকদল। বুধবার শ্যামলবাবুকে গ্রেফতারের পরেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য ছিল, ‘‘উপ-নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসাবে তৃণমূল এই জঘন্য চক্রান্ত করেছে।” বৃহস্পতিবার তমলুকে সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবও দাবি করেন, ‘‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই এ সব করছে তৃণমূল।’’

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ মানতে নারাজ। তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ তথা রাজ্যের বর্তমান পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এ দিন বলেন, ‘‘এটা আইনশৃঙ্খলার বিষয়। এ নিয়ে কিছু বলব না।’’ তবে জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘ধর্ষণের মতো বিষয় নিয়ে আমরা রাজনীতি করি না। পুলিশ পুলিশের কাজ করছে।’’ জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াও বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শ্যামল মাইতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, আদতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা ওই যুবতী চাকরির খোঁজে সম্প্রতি হলদিয়ায় এসেছিলেন। দুর্গাচকে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি। বুধবার থানায় দায়ের করা অভিযোগে যুবতী দাবি করেছেন, হলদিয়ায় আসার পরই শ্যামলবাবুর সঙ্গে তাঁর আলাপ। বছর পঞ্চান্নর ওই সিপিএম নেতা তাঁকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বুধবার সকালে তা নিয়ে কথা বলতে শ্যামলবাবু ওই যুবতীর বাড়িতে যান। এবং একা পেয়ে তাঁকে ধর্ষণ করা হয় বলে যুবতীর অভিযোগ। ওই অভিযোগ পেয়ে বুধবার বিকেলে শ্যামলবাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাঁকে হলদিয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে তিন দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়। এ দিন ওই যুবতীও আদালতে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে।

এ দিন শ্যামলবাবুর গ্রেফতারির প্রতিবাদে পথে নেমেছিল বামেরা। হলদিয়ার সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডলের নেতৃত্বে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। দিঘা–কলকাতা সড়কও অবরোধ করেন স্থানীয় সিপিএম কর্মীরা। তবে মিনিট পনেরোর মধ্যে উঠে যায় তা। বিকেলে সুতাহাটা, চৈতন্যপুর, হোরখালি, মহিষাদলে বেরোয় মিছিল।

সিপিএমের যুক্তি, ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে নন্দীগ্রামের এই জেলায় তৃণমূল নিরঙ্কুশ থাকলেও এ বারের বিধানসভা ভোটে অঙ্কটা পাল্টেছে। জেলার ১৬টি বিধানসভা আসনের মধ্যে হলদিয়া, তমলুক ও পূর্ব পাঁশকুড়া হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। বামেদের দখলে থাকা এই তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রই তমলুক লোকসভা আসনের মধ্যে পড়ে। তাই উপ-নির্বাচনের আগে ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখে তৃণমূল মিথ্যা মামলার খেলা খেলছে বলে সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ। দলের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির মতে, ‘‘বিরোধীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর রাজনীতি তো তৃণমূল আমলে জলভাত হয়ে গিয়েছে। এর বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন হবে।’’

আন্দোলনের জেরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয় সে জন্য সতর্ক পুলিশ। গ্রেফতারের পরই শ্যামলবাবুকে রাখা হয়েছে নন্দীগ্রাম থানায়। এ দিন আদালতে হাজিরার পরে ফের তাঁকে সেখানেই পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement