কার্শিয়াংয়ের বিভিন্ন গ্রামে রবিবার প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা সভাপতি অনীত থাপার প্রচার। নিজস্ব চিত্র
পাহাড়ের ভোটে আবার উঠে এল ‘গোর্খাল্যান্ড’ প্রসঙ্গ। ভোট প্রচারে আলাদা রাজ্য নিয়ে সাংসদ রাজু বিস্তার উদ্দেশ্যে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি তথা জিটিএ প্রধান অনীত থাপার বক্তব্য, পাহাড়বাসী গোর্খাল্যান্ড চায়, সেখানে বার বার এখন স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলা হচ্ছে, তাতে কী আছে জানাতে হবে বিজেপি সাংসদকে। তাঁর প্রশ্ন, মুখে আর কেন আসছে না আলাদা রাজ্যের কথা? গত শনিবার মংপু এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে গিয়ে অনীত এই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, যা নিয়ে অস্বস্তিতে পাহাড়ের বিজেপি৷ নেতাদের দাবি, কী ভাবে লক্ষ্যে পৌঁছনো যাবে তার নামই স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান।
অনীত বলছেন, ‘‘আমরা সবাই রাজ্য চাই, গোর্খাল্যান্ড চাই। আর চাওয়ার প্রক্রিয়াটা গত তিন দশক ধরে ভুল ছিল বলেই কিছু এগোয়নি। নিজের এলাকাকে সমৃদ্ধি, উন্নয়নের স্তরে উপরে নিতে হবে। আর এটা পুরোটাই কেন্দ্রীয় বিষয়।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘গত এক বছর ধরে শুধু পিপিএস (পার্মানেন্ট পলিটিক্যাল সলিউশন) কথাটা শুনছি। এই স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান শব্দটা এসেছে। এটাতে কী রয়েছে তা সাংসদকে বলতে হবে। তিন তিনজন সাংসদ বিজেপির এই আশ্বাসেই তো দিল্লি গিয়েছেন। ওঁরা বলুন, কবে বৈঠক, কীসের বৈঠক আর রাস্তা কোন পথে মিলবে!’’
প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার কাটক্ষের উত্তর বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা সরাসরি দেননি। তিনিএ দিন কার্শিয়াং বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে যৌথ গোর্খা মঞ্চের প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করেন। তিনি বলেন, ‘‘দুর্নীতিমুক্তি, স্বজনপোষণহীন পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গড়তে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের উন্নয়নের প্রকল্প, সুবিধা পাহাড়ে কার্যকর করতে হবে। সেখানে অনেকেই অনেক কথা বলছেন। সে সব দুর্নীতি ঢাকা দেওয়ার ব্যবস্থা ছাড়া কিছুই নয়।’’
দলীয় সূত্রের খবর, এ বার পাহাড়ে দু’দশক পর দ্বিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোট। অনীতের নেতৃত্বে সবচেয়ে বেশি আসনে প্রজাতান্ত্রিক প্রার্থীরা লড়ছেন। উল্টোদিকে, বিজেপি সাংসদের নেতৃত্বের বিমল গুরুং, অজয় এডওয়ার্ড বা মন ঘিসিংদের মতো দলগুলিকে নিয়ে মহাজোট হয়েছে। গোর্খা বা মহাজোটে ফাটল থাকলেও আপাতত যে যার মতো ভোটে লড়ছে। সেখানে অনীতের নেতৃত্বধীন জিটিএ-র পরিচালনা নিয়ে সাংসদ থেকে অজয় বার বার সরব হচ্ছেন। গত শনিবার অজয়ও দার্জিলিঙে দলের গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থীদের একযোগে নিয়ে বৈঠক করেন। অজয়ও বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পাহাড়ে পঞ্চায়েতের সুশাসন, মানুষের শাসনের কথা বলেছেন। অজয়ের কথায়, ‘‘পাহাড়ে গণতন্ত্র হরণ করে দুর্নীতি চলছে।’’
বিরোধীদের পর পর আক্রমণের মুখে শেষ অবধি আলাদা রাজ্যেকে দাবিদাওয়া, অভিযোগকে সামনে নিয়ে এসেছেন অনীত। পাহাড়ের রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, এক যোগে আক্রমণের মুখে পড়ে অনীতও পাল্টা চাপ তৈরি শুরু করেছেন। ভোটে জিতলে আলাদা রাজ্য বা স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান কোন পথে তা সামনে আনছেন।