বিয়ে করতে এসে পাত্র গেলেন সটান জেলে! 

কনের বাড়িতে পৌঁছতেই বরকে ঘিরে ভিড় করলেন ‘আত্মীয়েরা’। রব উঠল, ‘মেয়েবাড়ির আচার মেনে বরের পোশাক বদলাতে হবে’।

Advertisement

সমীর দত্ত 

বরাবাজার শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ০৩:৫০
Share:

পুলিশের গাড়িতে পাত্র দেবদীপ পাল। নিজস্ব চিত্র

কনের বাড়িতে পৌঁছতেই বরকে ঘিরে ভিড় করলেন ‘আত্মীয়েরা’। রব উঠল, ‘মেয়েবাড়ির আচার মেনে বরের পোশাক বদলাতে হবে’। বর এবং বরের বাবাকে নিয়ে ওঠা হল গাড়িতে। গাড়ি গিয়ে থামল থানায়। পাত্রীর পরিবারের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পাত্র এবং তাঁর বাবাকে গ্রেফতার করল পুরুলিয়ার বরাবাজার থানার পুলিশ। বোঝা গেল, আত্মীয়ের বেশে বিয়েবাড়িতে হাজির ছিলেন পুলিশকর্মীরাই। ধৃতদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণার অভিযোগ ছিল।

Advertisement

পাত্র, দেবদীপ পালের বাড়ি পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার বামুনাড়ায়। শনিবার পুরুলিয়া আদালতের বিচারক তাঁকে সাত দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। বরের বাবা তপন পালের জামিন মঞ্জুর করেছেন বিচারক।

পাত্রীর বাবা বরাবাজারের ব্যবসায়ী। তিনি জানিয়েছেন, একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের ঘটকালির ওয়েবসাইটে মেয়ের জন্য পাত্রের সন্ধান করছিলেন। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে দেবদীপের পরিবার তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। খোঁজ নিতে দুর্গাপুরে পাত্রের বাড়িতেও গিয়েছিলেন তাঁরা। পাত্রীর বাবা বলেন, ‘‘ওঁদের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছিলাম। ছেলে দুবাইয়ে মোটা মাইনের চাকরি করে। ইন্ডিয়ান স্কুল অব মাইনস-এ পড়েছে। বিয়ের কথা পাকা হয়ে যায়।’’ বিয়ের দিন স্থির হয় চলতি বছরের ৮ মার্চ।

Advertisement

আরও পড়ুন: যৌনপল্লি থেকে বিচারকের আসনে রূপান্তরকামী

বিয়ের ঠিক আগের দিন, বৃহস্পতিবার পাত্রীর বাড়িতে দাদাকে নিয়ে হাজির হন উত্তর চব্বিশ পরগনার ইছাপুরের এক যুবতী। দাবি করেন, তাঁর সঙ্গে দেবদীপের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। দিন কয়েক আগে তিনি খবর পান, দেবদীপ বিয়ে করছেন। যুবতী দাবি করেন, চেপে ধরায় দেবদীপ তাঁকে বলেন, বাড়ির চাপে বিয়ে করছেন। অল্প দিনের মধ্যেই বিবাহ বিচ্ছেদ চাইবেন।

ইছাপুরের মেয়েটির কাছে পাত্রীর পরিবারের ফোন নম্বর ছিল না। শুধু মেয়ের বাবার নাম আর ‘বরাবাজার’ কথাটা জানতেন। মেয়েটির দাদা বলেন, ‘‘দেবদীপকে বিশ্বাস করে আমার বোন ভুল করেছিল। কিন্তু আর একটা মেয়ে যাতে না ঠকে, সে কথা ভেবে বরাবাজারে চলে আসি।’’ ইছাপুরের যুবতীকে নিয়ে থানায় যান পাত্রীর বাবা। সম্পর্কের ‘প্রমাণ’ হিসেবে পুলিশের কাছে দেবদীপের কথাবার্তার রেকর্ড ও কিছু ছবি জমা দেন সেই মেয়েটি। দেবদীপ ও তাঁর বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন পাত্রীর বাবা।

এর পরেই পাত্রীর বাবা ফোনে আমন্ত্রিতদের জানিয়ে দেন, ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মৃত্যুর জন্য বিয়ে হচ্ছে না। পাত্রপক্ষকে কিছু জানানো হয়নি। শুক্রবার দুপুরে বরযাত্রী নিয়ে পাত্র এসে পৌঁছন বরাবাজারে। দেবদীপ ও তাঁর বাবাকে পুলিশ কী অভিযোগে তুলে নিয়ে গিয়েছে তা জানিয়ে বরযাত্রীদের রওনা করিয়ে দেওয়া হয় ফিরতি পথে। বামুনাড়ার ভৈরবতলা এলাকায় দেবদীপদের বাড়ি। পড়শিদের একাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা বিয়ের বিষয়টি জানতেন না। কেউ নিমন্ত্রণও পাননি।

থানায় গিয়ে এ দিন দেখা যায়, গরাদের পাশে বরের টোপর গড়াগড়ি খাচ্ছে। তখন এবং আদালতে তোলার সময়ে দেবদীপ কথা বলতে চাননি। তপনবাবু বলেন, ‘‘ছেলের সঙ্গে কারও সম্পর্ক আছে বলে জানতাম না।’’

ইছাপুরের যুবতীর বয়ান এ দিন লিপিবদ্ধ করেছে পুলিশ। যাঁর সঙ্গে দেবদীপের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, সেই মেয়েটি বলেন, ‘‘ভাগ্যিস, কথাটা আগে জানতে পারলাম!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement