আলুর ভর্তুকিতে ২০০৮ সালের আর্থিক কেলেঙ্কারির পুনরাবৃত্তি আর চাইছে না রাজ্য সরকার। তাই আলুতে সরকারি ভর্তুকি পেতে এ বার জিপিএস প্রযুক্তি থাকতেই হবে ট্রাকে। এমনই নিদান রাজ্য সরকারের।
একদিকে অতিরিক্ত ফলন আর অন্য দিকে বন্যা। জোড়া ধাক্কায় যে গতিতে হিমঘর থেকে আলু বের হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। ফলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত আলু থেকে গিয়েছে। হিসেব বলছে, অন্তত ৪৩ লক্ষ টন আলু মজুত রয়েছে রাজ্যের হিমঘরগুলিতে। এই পরিস্থিতিতে ভর্তুকি না দিলে আলু যেমন অপচয় হবে, তেমনিই ক্ষতির মুখে পড়বেন রাজ্যের চাষিরা। অতিরিক্ত ফলনে লাভের কড়ি সে ভাবে ঘরে তোলা যাবে না তা আগেভাগেই টের পেয়েছিলেন রাজ্যের আলু ব্যবসায়ীরা। তাই বাজার না থাকায় বিপদ বুঝে রাজ্যের চাষিরাই বেশি পরিমাণ আলু হিমঘরে রেখেছিলেন। এই আলু ভিন রাজ্যে চালান না হলে সমস্যায় পড়বেন রাজ্যের চাষিরা। সমস্যা আঁচ করে দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যের কৃষক সংগঠনগুলি চাপ বাড়াচ্ছিল সরকারের উপর। উদাহরণ হিসেবে ছিল উত্তরপ্রদেশ এবং গুজরাত।
তবে রাজ্য সরকার পাল্টা শর্ত দেয়, একমাত্র জিপিএস প্রযুক্তিযুক্ত ট্রাককেই সেই সুবিধা দেওয়া হবে। কারণ একমাত্র জিপিএসের মাধ্যমেই জানা যাবে আদৌ আলু নিয়ে ওই ট্রাক ভিন রাজ্যে যাচ্ছে কি না। প্রশাসন সূত্রের খবর, বাম আমলে ২০০৮ সালে এমন বহু আলু ব্যবসায়ীই সরকারি ভর্তুকি হাতিয়ে ছিলেন। কিন্তু আদৌ আলু তাঁরা ভিন রাজ্যে পাঠাননি বলে অভিযোগ। সে বার কোটি কোটি সরকারি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেই ‘ভুল’ থেকেই শিক্ষা নিয়ে তৃণমূল সরকারের এই নয়া সিদ্ধান্ত। হিমঘর মালিকরা রাজ্য সরকারের সেই শর্ত মেনেও নিয়েছেন।
কিন্তু সমস্যা সেখানেই মিটছে না। প্রশ্ন উঠছে, আলু যদি রাস্তায় নামিয়ে নেওয়া হয়? তাহলে জিপিএস প্রযুক্তি কী কাজে আসবে?
এর উত্তরে অবশ্য কৃষি দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘জিপিএসের রুটম্যাপ, আলু বিক্রেতা এবং ক্রেতার টাকা লেনদেনের নথি প্রতিলিপি সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়েই তারপর ভর্তুকি দেওয়া হবে।’’ হিমঘর সংগঠনের রাজ্য সভাপতি পতিতপাবন দে বলেন, ‘‘এর আগে ভর্তুকি নিয়ে অনিয়ম হয়েছে। তাই কাজে স্বচ্ছতা প্রয়োজন। এ বার ট্রাকের রুটম্যাপের সঙ্গে অন্য সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে তবেই সরকারি ভর্তুকি মিলবে।’’