রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার অভিযোগ জানিয়ে টুইট ধনখড়ের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
মুখ্যমন্ত্রীকে ফের তোপ রাজ্যপালের। ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকার সরকারি সহায়তা পাওয়া থেকে বাংলার কৃষকদের বঞ্চিত করে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— সোমবার এমনই অভিযোগ তুললেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিষ্ক্রিয়তা এবং ব্যর্থতায় রাজ্যের কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে টুইটারে লিখেছেন ধনখড়। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে যে চিঠি তিনি লিখেছেন, তা-ও তুলে ধরেছেন সে টুইটে।
কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা বা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের রূপায়ণ বাংলায় না হতে দেওয়ার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আগেও একাধিক বার আক্রমণ করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। এ বারের চিঠি তথা আক্রমণও সেই বিষয়েই। প্রধানমন্ত্রী কিসান কল্যাণ নিধি বা পিএমকিসান প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যে আর্থিক সহায়তা কেন্দ্র দফায় দফায় পাঠাচ্ছে গত বছর থেকে, সেই আর্থিক সহায়তা পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা পাচ্ছেন না। রাজ্যপাল এ দিন তা নিয়েই তোপ দেগেছেন। রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার কারণেই এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে রাজ্যপাল লিখেছেন।
‘‘এটা দেখে সত্যিই খুব খারাপ লাগছে যে, আমাদের রাজ্যে ৭০ লক্ষ কৃষককে এখনও পিএমকিসান প্রকল্পের সুবিধা পেতে দেওয়া হচ্ছে না। কৃষকরা ইতিমধ্যেই ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা হারিয়েছেন, যা তাঁদের ন্যায্য প্রাপ্য,’’ মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে চিঠিতে এমনই লিখেছেন রাজ্যপাল। দেশের অন্যান্য রাজ্যে এই প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে এবং কৃষকদের হাতে সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৯২ হাজার কোটি টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে রাজ্যপাল জানিয়েছেন। পিএমকিসান প্রকল্পে দেওয়া টাকার সামগ্রিক হিসেব দিয়েই থামেননি রাজ্যপাল। প্রত্যেক কৃষকের অ্যাকাউন্টে ১২ হাজার টাকা করে ঢুকেছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। বাংলার কৃষকরা এই ১২ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা পাওয়া থেকে বঞ্চিত কেন থাকবেন, সে প্রশ্ন তুলেছেন।
আরও পড়ুন: নতুন করে সংক্রমিত প্রায় ৩ হাজার, সুস্থতার হারে স্বস্তি
ঠিক কী কারণে বাংলার কৃষকরা এই অর্থ পাচ্ছেন না, তার ব্যাখ্যাও এ দিন জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা যে চিঠিকে তিনি টুইটারে প্রকাশ করেছেন, আসলে সেই চিঠিতেই এই ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে। রাজ্যপাল লিখেছেন, ‘‘পিএমকিসান একটি কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প, যার ১০০ শতাংশ খরচ কেন্দ্রই বহন করে এবং এই প্রকল্প ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে চলছে। এই প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা সরাসরি প্রাপকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয় সুতরাং কাউকে কমিশনও দিতে হয় না।’’ তা হলে এই প্রকল্পের সুবিধা কেন পাচ্ছেন না বাংলার কৃষকরা?
রাজ্যপাল লিখেছেন— রাজ্য সরকারের কাজ হল শুধু কৃষক পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করে দেওয়া, কিন্তু রাজ্য তা করছে না। রাজ্যপালের কথায়, ‘‘আমি বুঝতে পারছি না, কেন রাজ্য সরকার এটা করছে না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা চিঠিতে রাজ্যপালের তোপ, ‘‘কৃষকদের নিয়ে এই ‘নিষ্ঠুর রসিকতা’ এবং ঐতিহাসিক অবিচার দেখে আমাদের বোঝা উচিত, শাসনের লক্ষ্য হল জনসাধারণের কল্যাণ।’’
আরও পড়ুন: চরম দারিদ্র, সন্তান কী খাবে, হতাশায় তিন দিনের মেয়েকে গলা টিপে খুন মায়ের!
রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যপালের এই আক্রমণের কোনও জবাব দেওয়া হয়নি। তবে পিএমকিসান প্রকল্পের সুবিধা কেন রাজ্যের কৃষকরা পাচ্ছেন না, সে প্রশ্ন আগেও উঠেছিল। তৃণমূলের তরফ থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সে সময়ে জানিয়েছিলেন, এই প্রকল্পকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করতে চাইছে বিজেপি। রাজ্য সরকার কৃষকদের পাশে দাঁড়াচ্ছে, সুতরাং রাজনৈতিক উদ্দেশপ্রণোদিত কোনও প্রকল্পের প্রয়োজন নেই, এমনও জানিয়েছিলেন তিনি।