Visva Bharati University Plaque Controversy

মেলালেন রবি ঠাকুরই মেলালেন! বিশ্বভারতীর ফলককাণ্ডে আবার নবান্নের পাশে রাজভবন

ফলক বিতর্কে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে চিঠি দেন রাজ্যপাল। এ বার প্রকাশ্যে মুখ খুলে কার্যত কর্তৃপক্ষ এবং উপাচার্যের দিকেই তোপ দাগলেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:০০
Share:

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।

বিশ্বভারতীর ফলক বিতর্কে মুখ খুলে কড়া বার্তা দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। জানালেন, রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি মুছে দেওয়ার চেষ্টা হলে কোনও ভাবেই তা বরদাস্ত করা হবে না। এর আগে ফলক বিতর্কে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে চিঠি দিয়েছিলেন বোস। এ বার এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলে কার্যত কর্তৃপক্ষ এবং উপাচার্যের দিকেই তোপ দাগলেন রাজ্যপাল।

Advertisement

বুধবার রাজভবনে বেশ কয়েকটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সামনে তিনি বিশ্বভারতীর ফলক বিতর্ক নিয়ে মুখ খোলেন। রাজ্যপাল বলেন, “গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ আমাদের আবেগ এবং অনুভূতি। তিনি গোটা ভারতের সংস্কৃতির প্রতিনিধি। তাঁকে উপেক্ষা করা কখনওই উচিত নয়।” রাজ্যপাল এ-ও জানান যে, তিনি ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে জানতে চেয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠির উত্তর পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রেক্টর’ হিসাবে পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন তিনি।

শান্তিনিকেতনকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র বা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করার পর থেকেই অভিযোগ উঠছে, এই কাজের জন্য উপাচার্য নিজে কৃতিত্ব নিতে চান তো বটেই, আচার্য হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাও তিনি তুলে ধরতে চান। এই আবহে সম্প্রতি বিশ্বভারতীর তরফে উপাসনা গৃহ, ছাতিমতলা এবং রবীন্দ্রভবনের উত্তরায়ণের সামনে শ্বেতপাথরের ফলক বসানো হয়। তাতে লেখা হয়, ‘ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’। তার ঠিক নীচে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং উপাচার্যের নাম রয়েছে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের নাম নেই। এই নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি দেয় শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট এবং শান্তিনিকেতন আশ্রম সঙ্ঘ। একই ভাবে বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটি ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশনের (ভিবিইউএফএ) তরফেও প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ও রাজ্যপালকে ইমেল করে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ফলক-কাণ্ড নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়।

Advertisement

ফলক বিতর্কে বিরল ঐক্য দেখা যায় শাসক তৃণমূল এবং বিরোধী বিজেপির মধ্যে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং ওই ফলকের বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁর সুরেই সুর মিলিয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে আক্রমণ করতে শুরু করেন রাজ্যের বিজেপি নেতারা। রবিবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখে উপাচার্যের বিরোধিতা শোনা গিয়েছিল। সোমবার কড়া ভাষায় বিদ্যুতের সমালোচনা করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক তথা বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ অনুপম হাজরা।

বিশ্বভারতীর ফলক বিতর্ক নিয়ে পুজো মিটতেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং উপাচার্য বিদ্যুৎকে আক্রমণ শুরু করেছিল তৃণমূল। একের পর এক শাসকদলের নেতা-নেত্রীরা সমাজমাধ্যমে কর্তৃপক্ষের নিন্দা করে পোস্ট করছিলেন। অবিলম্বে ফলকে রবি ঠাকুরের নাম ফিরিয়ে আনার দাবিও জানিয়েছিলেন তাঁরা। মমতাও সাংবাদিক বৈঠকে ফলক বিতর্ক নিয়ে মুখ খোলেন। বিশ্বভারতীকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার সুরে তিনি বলেন, ‘‘ওই ফলক না সরালে এবং রবি ঠাকুরের নাম ফিরিয়ে না আনলে ওখানে আমাদের লোক রবীন্দ্রনাথের ছবি বুকে নিয়ে আন্দোলন শুরু করবে।’’ মমতা বলেছিলেন, ‘‘বিশ্বভারতী ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্য। তিনিই প্রতিষ্ঠাতা। ওঁর নাম সরিয়ে দিয়েছে! পুজো বলে আমরা এটা চুপচাপ হজম করেছিলাম।’’ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তখন খানিকটা পিছু হটে জানান, ফলকটি ‘অস্থায়ী’। কিন্তু তাতেও বিতর্ক থামেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement