রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। ফাইল চিত্র।
আট ভাইবোনের চার জনের নামের সঙ্গেই জড়িয়ে সুভাষচন্দ্র বসু। স্বাধীনতা সংগ্রামী বাবার কারণে সেই সূত্রে তিনি নিজেও সিভি আনন্দ বোস। বাংলার মাটিতে ১০০ দিন যাপনের মুহূর্তকে স্মরণ করে এই রকম সব ‘ঘরের কথা’ এক জায়গায় করে লিখে রাজ্যপাল লিখেছেন, বাংলা মা’-এর সঙ্গে তাঁর অদৃশ্য নাড়ির টান। বাংলা আর বাঙালি— জীবনের সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্ক বোঝাতে তিনি লিখেছেন, শৈশবেই ভালবেসে ফেলেছিলেন ছোট্ট ‘মিনি’কে। লিখেছেন, তাঁর পড়া শ্রেষ্ঠ গল্প সেই ‘কাবুলিওয়ালা’ই।
গত ২৩ নভেম্বর এ রাজ্যের রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নিয়েছেন বোস। মার্চের গোড়ায় পূর্ণ হওয়া এই ১০০ দিনকে ছবি আর লেখায় বই আকারে প্রকাশ করেছে রাজভবন। সেখানেই বোস লিখেছেন, ‘আমাদের আট ভাইবোনের শৈশব কেটেছে বাবার মুখে শোনা ‘নেতাজির বীরগাঁথায়’। আর ছয় ভাইবোনের নামের সঙ্গে ‘বোস’ জুড়ে গিয়েছে নেতাজির প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালবাসায়।’ সেই সূত্রেই তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের গ্রামে আমরা ‘বোস ফ্যামিলি’ হিসেবেই পরিচিত ছিলাম।’ শুধু তাই নয়, তাঁর নামে আনন্দ-এর সঙ্গে তিনি স্বামী বিবেকানন্দের সংযোগের কথাও উল্লেখ করেছেন।
রবীন্দ্রনাথও দূরের কেউ ছিলেন না। তা উল্লেখ করে রাজ্যপাল লিখেছেন, ‘বরং প্রতিটি দিন তিনিই সেনসেশন ছিলেন।’ তা কেমন? রাজ্যপাল লিখেছেন, ‘মাত্র আট বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের লেখা গল্প পড়ে ভালবেসে ফেলেছিলাম মিনিকে। এখনও পর্যন্ত তা-ই আমার কাছে শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হয়ে আছে।’ এই প্রসঙ্গে বিশ্ববন্দিত লেখকদের উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘কাবুলিওয়ালা’ই শ্রেষ্ঠ। ব্যাঙ্ককর্মী হিসেবে বাংলায় দীর্ঘসময়ের কর্মজীবন, নিরামিষাশির রসগোল্লা— প্রেম এবং দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত নিত্য যাতায়াত ছিল রাজভবনের বর্তমান বাসিন্দার। সেই সূত্রেই স্মৃতির পথে হেঁটেছেন টালিগঞ্জ, কালীঘাট, পার্কস্ট্রিট, ক্যামাক স্ট্রিট, আলিপুর ও বালিগঞ্জে। এই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘আমার মধ্যে একটা বাংলা গড়ে উঠেছে।’
তার পরেই কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে বোস লিখেছেন, ‘আমি বাংলার দত্তকপুত্র হতে চাই। এই বাংলার বাতাসে শ্বাস নিতে চাই। এই পথ ধরে হাঁটতে চাই। এই মহানভূমি নিশ্চয়ই আমাকে সেই স্থান দেবে।’ এ রাজ্যে তাঁর সেই যাত্রার ১০০ দিনের মাথায় প্রকাশিত পুস্তিকায় রাজ্যপাল লিখেছেন, ‘হাজার মাইল পথচলার শুরু হয় একটি পদক্ষেপেই।’ সেই যাত্রার ইঙ্গিত স্পষ্ট করে রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করেছেন তিনি, ‘চিত্ত যেথা ভায় শূন্য উচ্চ যেথা শির...।’ সেই সঙ্গেই তিনি লিখেছেন, ‘এ যাত্রায় আমি একা নই। আমার সঙ্গে রয়েছেন বাংলার ভাই ও বোনেরা।’