কলকাতা ও জেলায় রাজ্য সরকারি পরিবহণ হিসেবে মূলত বাসের উপরেই নির্ভর করেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের সরকারি পরিবহণের দুর্দশার কথা এ বার কাযর্ত মেনে নিল বিধানসভার ‘এস্টিমেট কমিটি’। বরাদ্দ অর্থ হাতে না পাওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও কমিটির রিপোর্টে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এই সঙ্কট কাটাতে অবিলম্বে ভাড়াবৃদ্ধির পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। সরকারি বাসের ভাড়া বৃদ্ধি না হলেও বেসরকারি বাসের ইচ্ছা মতো ভাড়াবৃদ্ধির দিকেও পরিবহণ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে কমিটি।
কলকাতা ও জেলায় রাজ্য সরকারি পরিবহণ হিসেবে মূলত বাসের উপরেই নির্ভর করেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। রাস্তায় পর্যাপ্ত সংখ্যায় বাস না থাকায় যাত্রীদের যন্ত্রণার অভিযোগ এখন নিয়মিত। সরকারি বাস পরিষেবার দুর্বল ছবি ধরা পড়েছে বিধানসভার সংশ্লিষ্ট কমিটির রিপোর্টেও। কমিটির চেয়ারম্যান, তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক সুদীপ্ত রায়ের সম্প্রতি জমা দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, পরিবহণে বাজেট বরাদ্দ কমেছে। আর তার ফলে পরিষেবায় খামতি তৈরি হচ্ছে। রিপোর্টে দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ‘২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ৩৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে কমে হয়েছে ২৩২ কোটি। তার পরের অর্থবর্ষে তা আরও কমে ১২১ কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে’। তার পরেও কমিটির পর্যবেক্ষণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ‘বরাদ্দ করা সেই টাকাও অর্থ দফতর দেয়নি।’ কলকাতা ও লাগোয়া দু’টি বড় ডিপো পরিদর্শন ও নথি যাচাইয়ের পরে ‘এস্টিমেট কমিটি’ মনে করছে, এই টাকার অভাবেই রক্ষণাবেক্ষণের কাজও করা যাচ্ছে না। এবং সেই কারণে বড় সংখ্যক বাস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুধু রক্ষণাবেক্ষণই নয়, কর্মীর অভাবের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
সরকারি বাস রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য কিছু কাজের বরাত দেওয়া রয়েছে বেসরকারি এজেন্সিকে। তাদেরও বিপুল টাকা বকেয়া রয়েছে সরকারের কাছে। সেই কারণে কিছু জায়গায় সেই এজেন্সিও কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। অবিলম্বে তাদের বকেয়া মিটিয়ে কাজ চালু করার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। প্রসঙ্গত, পরিবহণ ক্ষেত্রে সরকারি অবহেলা, পর্যাপ্ত কর্মী না থাকা বা বেসরকারি এজেন্সির হাতে গাড়ি চালানোর ভার দিয়ে তার পরে আরও নানা সমস্যার কথা তুলে আন্দোলনে আছে বাম শ্রমিক সংগঠনগুলির সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন। তাদের বক্তব্যের সঙ্গে কমিটির এই রিপোর্টের নির্যাস অনেকটাই মিলে যাচ্ছে।
পরিবহণ বিভাগের আয় বাড়াতে কমিটির রিপোর্টে জরুরি ভিত্তিতে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টিও ভাবতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। টিকিট বিক্রি ও বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে জরিমানা আদায়েও জোর দিতে বলা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
ডিজ়েল ও পেট্রলের মতো জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় ব্যাটারি-চালিত বাসের সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। বলা হয়েছে সে ক্ষেত্রে ব্যাটারির চার্জের জন্য প্রয়োজনীয় স্টেশন তৈরির কথাও।