ফাইল চিত্র।
শহর হোক বা জেলা, অনেক স্কুলেই শিক্ষক-ঘাটতির সমস্যা দীর্ঘ কালের এবং সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নিয়োগের মাধ্যমেই তার সুরাহা করা যেতে পারে বলে শিক্ষা শিবিরের অভিমত। তার বদলে এক বার গ্রামের স্কুলশিক্ষকদের শহরে বদলির সুযোগ দিয়ে ফের শহর থেকে গ্রামের স্কুলে শিক্ষক বদলির সিদ্ধান্তে ‘অন্য উদ্দেশ্য’ আছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগ, ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার দাবিতে সরকারি কর্মীদের আন্দোলনে বহু শিক্ষকও শামিল হয়েছেন এবং সেই আন্দোলন বানচাল করতেই চক্রান্ত করে বেছে বেছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের শিক্ষক-সদস্যদের দূরে বদলি করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে মামলার কথাও তাঁরা ভাবছেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি পুরুলিয়ায় বলেন, ‘‘একেবারেই না। আমরা মনে করি, আন্দোলন করার অধিকার সকলেরই রয়েছে।’’
শিক্ষা দফতর শহর থেকে গ্রামে শিক্ষক বদলির প্রক্রিয়া শুরু করেছে সোমবার। বলা হয়েছে, মূলত শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বজায় রাখতেই সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের শিক্ষকদের শহর থেকে গ্রামে পাঠানো হচ্ছে। প্রথম দফায় ৫৮০ শিক্ষককে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বদলির সুপারিশপত্র দেওয়ার কাজ চলছে বলে খবর।
ব্রাত্য বলেন, “মহামান্য আদালত এই মর্মে আমাদের একটা নির্দেশ দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী শিক্ষা দফতর তালিকা করেছে। স্কুলগুলির শূন্য পদ অনুসারেই তা কার্যকর করা হবে এবং তা হবে মহামান্য আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষেই।’’
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের মঞ্চের বেশ কয়েক জন বদলির চিঠি পেয়েছেন। এ ভাবে বেছে বেছে বদলির ব্যাপারটা আমরা মেনে নেব না। আমরা মামলা করার কথা ভাবছি।’’ এ দিন শিক্ষক বদলি নিয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছে মঞ্চ। ভাস্করের বক্তব্য, কোনও স্কুলে অতিরিক্ত শিক্ষক থাকলে বদলি হতেই পারে। কিন্তু তার একটা স্বচ্ছ নীতি থাকা দরকার। ‘‘কোনও শিক্ষকের বাড়ির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে স্কুল রয়েছে। তা সত্ত্বেও তাঁকে ১০০ কিলোমিটার দূরে পাঠিয়ে দেওয়া হল। এটা হতে পারে না। শূন্য পদের তালিকা তৈরি করতে হবে,’’ দাবি ভাস্করের।
মঞ্চের নেতা কিঙ্কর অধিকারীর অভিযোগ, এ ভাবে বদলির মাধ্যমে মঞ্চকে ভয় দেখানো হচ্ছে। আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। কিঙ্করের মতে, মঞ্চের আন্দোলনকারীদের মধ্যে যাঁরা কর্মবিরতিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের নামের তালিকা শিক্ষা দফতরের কাছে আছে। তাঁর প্রশ্ন, যাঁদের কাছে শো-কজ় বা কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানো হয়েছিল, তাঁদেরই বেছে বেছে বদলি করাহচ্ছে না তো? অভিযোগ,মহিলাদের ছাড় দিতে গিয়ে কোপে পড়ছেন প্রবীণ শিক্ষকেরা। অনেককেই ৫০-৫৫ বছর বয়সে বদলি করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, এক বছর আগে উৎসশ্রী প্রকল্পে বদলি হওয়ার পরে ফের বদলি যদি হতে হয়, তা হলে উৎসশ্রী করে লাভ কী হল?
বদলি প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘এক জন চিকিৎসক যদি বলেন যে, তিনি পুরো সময় ধরে কলকাতায় চাকরি করবেন, সেটা তো হতে পারে না। শিক্ষকদের বদলির পোর্টাল থাকবে। বদলির সুযোগ-সুবিধাও থাকবে। তবে সেটা একটা নির্দিষ্ট মেয়াদে চাকরি করার পরে।’’