লিখে দেওয়া হয়েছে রক্তদাতা নিয়ে আসার কথা। নিজস্ব চিত্র
‘লোকবল’ থাকলে তবেই কি রক্ত মিলবে? বেসরকারি ক্ষেত্রে তো বটেই, সরকারি হাসপাতালগুলিতেও এখন এমনই অবস্থা। অভিযোগ, প্রয়োজনের সময়ে ডোনার্স কার্ড দেখিয়েও রক্ত মিলছে না। উল্টে, রোগীর পরিজনদের বলা হচ্ছে, ‘ডোনার নিয়ে এলে রক্ত পাবেন।’ পরিজনেরা বলছেন, সকলের লোকবল তো সমান নয়। দাতা জোগাড় না হলে কি রক্ত মিলবে না? হাসপাতালেও যদি রক্তদাতা নিয়ে ঘুরতে হয়, তা হলে রক্তদান করে লাভ কী?
সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাতে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে এক রোগীর আত্মীয় এ পজিটিভ রক্তের জন্য অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। বারবার বলছেন, চিকিৎসক দ্রুত রক্ত চাইছেন। রোগীর অবস্থা ভাল নয়। কিন্তু কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে, ‘‘রক্ত দেওয়া যাবে না। রক্ত নেই। কয়েক জন রক্তদাতাকে নিয়ে আসুন।’’ উত্তেজিত সেই আত্মীয় চেঁচাতে শুরু করেন, ‘‘আমার লোক মরে যাচ্ছে, আমি এখন রক্তদাতা খুঁজতে যাব?’’
কাউন্টারের লোকজন অনড়। তাঁরা জানালেন, মাত্র দুই ইউনিট এ পজিটিভ রক্ত রয়েছে। বলা হল, ‘‘সব দিয়ে দিলে কাজ চলবে কী করে?’’ এ কথায় আরও উত্তেজিত সেই আত্মীয়। কাউন্টারের এক জন এ বার তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘দিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু কথা দিন, কয়েক জনকে নিয়ে এসে রক্ত দেওয়াবেন!’’ ওই শর্তে রাজি হয়ে রক্ত পান ওই রোগীর আত্মীয়।
ভিডিয়োয় দেখা এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, এটা কোনও সরকারি হাসপাতালের ‘প্রাক্টিস’ হতে পারে না। এক জন লেখেন, ‘ন্যাশনাল ব্লাড পলিসি’ অনুযায়ী, ভর্তি থাকা রোগীর জন্য হাসপাতালেরই রক্তের ব্যবস্থা করার কথা। তার বদলে ‘ডোনার’ আনতে বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত লোকজন অবশ্য নির্দিষ্ট কোনও সরকারি নীতি এবং প্রচার না থাকাকেই এর জন্য দায়ী করছেন। এক রক্তদান আন্দোলনকারীর কথায়, ‘‘ডেঙ্গি বা সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ নিয়ে সরকার যতটা প্রচার করে, রক্তের জন্য তার এক কণাও করে না।’’ রক্তদান আন্দোলনে যুক্ত ডি আশিসের মতে, ‘‘উৎসবের মরসুমে সে ভাবে শিবির করা যায়নি। এ নিয়ে কারও মাথাব্যথাও নেই। ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিকেই বা দোষ দিই কী করে? রক্ত না থাকলে তারা দেবে কী করে? তাই কার্ড থাকলেও রক্তদাতা ধরে আনতে বলা হচ্ছে।’’
রক্তদান কর্মসূচির সঙ্গে যুক্তেরা জানাচ্ছেন, রাজ্যে ৭০টি সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে। এ ছাড়া, ৩৫টি বেসরকারি ও ১৬টি কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক আছে। তা সত্ত্বেও এক বছরে এ রাজ্যের প্রয়োজন ১৫ লক্ষ ইউনিট রক্তের ব্যবস্থা হচ্ছে না। মেরেকেটে ১১ লক্ষ ইউনিট জোগাড় হচ্ছে। এক রক্তদাতা বলেন, ‘‘বিকেল পাঁচটার পরে সরকারি হাসপাতাল রক্ত নেয় না। বলা হয়, সকালে আসুন।’’ রক্তদান আন্দোলনে যুক্ত দীপঙ্কর মিত্রেরও বক্তব্য, ‘‘শিবির করার আগ্রহ বাড়ছে না। সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক সম্প্রতি ২০০ বোতল রক্ত পাবে ভেবে এক রক্তদান কর্মসূচিতে গিয়েছিল। পেয়েছে ১৮ বোতল। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ এক জায়গায় গিয়েছিল ৪০০ বোতলের আশায়। মিলেছে ৩১ বোতল।’’
তা সত্ত্বেও ‘ডোনার’ আনতে বলে কি ফিরিয়ে দেওয়া যায়? সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা স্বপন সোরেন বলছেন, ‘‘এটা কখনওই করা যায় না। রক্ত জোগাড়ের দায় রোগীর পরিজনদের নয়।’’ রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘হাসপাতালের কাউন্টার থেকে কাউকে একেবারে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এটা মানতে পারব না। ডোনার আনতে বলার উদ্দেশ্য রক্তদানে উৎসাহ দেওয়া। অনেকে নিজে সমস্যায় পড়লে রক্তদানের গুরুত্ব বোঝেন।’’