ধন্বন্তরী পুজোতেও সরকারি অনুদান

রাজ্যের একমাত্র সরকারি স্নাতকোত্তর আয়ুর্বেদ মেডিক্যাল কলেজ রাজাবাজারের শ্যামাদাস বৈদ্য শাস্ত্রপীঠ। সেখানকার অধ্যক্ষ মৃদু গুপ্তের কথায়, ‘‘আমাদের পুজো, খাওয়াদাওয়া, জ্বরের উপর সেমিনার—সব কিছু মিলিয়ে ১০ হাজার টাকার মতোই খরচ হয়েছে। অদিতিদেবী জানিয়েছেন, টাকা অনুমোদন হয়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২৪
Share:

শ্যামাদাস বৈদ্য শাস্ত্রপীঠে ধন্বন্তরী পুজো। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

তিনি আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের দেবতা ‘ধন্বন্তরী’। কালীপুজোর আগের ত্রয়োদশীতে তাঁর পুজো করেন আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা। এত দিন তা হত কার্যত নিভৃতে, সাদামাটা ভাবে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘কল্যাণে’ এবং মমতা সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের ‘বদান্যতায়’ সেই পুজোই এ বার রাজ্যের সমস্ত সরকারি আয়ুর্বেদ কলেজে রীতি মতো ঘটা করে পালন করা হল। চলল পাত পেড়ে খিচুড়ি-বেগুনি-ফুলকপির রোস্ট-মিষ্টি-পায়েসের ভোজ। আবার কলেজের সেমিনার কক্ষে ধন্বন্তরীর মূর্তির পাশেই আয়োজিত হল আলোচনাসভা।

Advertisement

কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আয়ুর্বেদের প্রসারে উদ্যোগী। গত বছর ‘ধন্বন্তরী ত্রয়োদশী’-কে সটান ‘জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করে দেয় নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সব রাজ্যে সেই দিবস পালনের নির্দেশও যায়। এ বছর ধন্বন্তরী পুজোর দিন অর্থাৎ গত মঙ্গলবার দেশের প্রথম এইমস-এর ধাঁচের আয়ুর্বেদ চিকিৎসা-কেন্দ্র ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ আয়ুর্বেদ’-এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

মোদী সরকারের সঙ্গে অনেক মতভেদ ও সংঘাত থাকলেও আয়ুর্বেদ দিবস পালন এবং জাঁকজমক করে আয়ুর্বেদ কলেজে ধন্বন্তরী পুজোর ব্যাপারে রাজ্য সরকারের যে বিরোধ নেই তা চলতি বছর রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আয়ুষ বিভাগের সিদ্ধান্তেই স্পষ্ট। প্রত্যেক সরকারি আয়ুর্বেদ কলেজ ও হাসপাতালকে আয়ুর্বেদ দিবস পালনের জন্য এ বছর ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তার প্রধান অংশই হল ধন্বন্তরী পুজো। নিজেদের পকেট থেকে চাঁদা দিয়ে পুজোর বদলে একেবারে সরকারি টাকা প্রাপ্তি! ফলে দ্বিগুণ ঘটা এবং উৎসাহে রাজ্যের সরকারি আয়ুর্বেদ হাসপাতালে পুজো করেছেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতরের আয়ুষ বিভাগের অধিকর্তা অদিতি দাশগুপ্তের কথায়, ‘‘আয়ুষ মন্ত্রক নির্দেশ দিয়েছে আয়ুর্বেদ দিবস পালন করার। তাতে টাকা লাগবেই। তাই রাজ্যের তরফ থেকে আয়ুর্বেদ কলেজগুলিকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রত্যেকটি কলেজকে খরচের হিসেব পাঠাতে বলা হয়েছে।’’ রাজ্যের একমাত্র সরকারি স্নাতকোত্তর আয়ুর্বেদ মেডিক্যাল কলেজ রাজাবাজারের শ্যামাদাস বৈদ্য শাস্ত্রপীঠ। সেখানকার অধ্যক্ষ মৃদু গুপ্তের কথায়, ‘‘আমাদের পুজো, খাওয়াদাওয়া, জ্বরের উপর সেমিনার—সব কিছু মিলিয়ে ১০ হাজার টাকার মতোই খরচ হয়েছে। অদিতিদেবী জানিয়েছেন, টাকা অনুমোদন হয়ে গিয়েছে।’’

রাজ্যের একমাত্র সরকারি আয়ুর্বেদ ফার্মাসি কলেজ গ্রে স্ট্রিটের বিশ্বনাথ আয়ুর্বেদ মহাবিদ্যালয় ও হাসপাতাল। সেখানকার অধ্যক্ষ দেবাশিস ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের ভাল করে পুজো হয়েছে। পেইন ম্যানেজমেন্টের উপরে সেমিনারও হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও এসেছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, যা খরচ হয়েছে তা সরকার দিয়ে দেবে।’’ ধুমধাম করে পুজো ও ভোজ হয়েছে দীনেন্দ্র স্ট্রিটে রাজ্যের একমাত্র সরকারি স্নাতক স্তরের আয়ুর্বেদ কলেজ জে বি রায় আয়ুর্বেদ মহাবিদ্যালয়েও।

‘ধন্বন্তরী’ হলেন বিষ্ণুর এক রূপ। তাঁর চার হাতে শঙ্খ-চক্রের পাশাপাশি রয়েছে অমৃতের ভাণ্ড এবং কোথাও পদ্ম অথবা কোথাও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের পুঁথি।

প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি হাসপাতালে কি পুজোআচ্চা করা যেতে পারে? অদিতিদেবীর উত্তর, ‘‘পুজো করা-না করার প্রশ্ন এ ক্ষেত্রে ওঠেনি। কারণ, প্রথম থেকেই এই পুজো হয়ে আসছে।’’ কিন্তু হাসপাতালে সেই পুজোর জন্য রাজ্য আগে কখনও টাকা দেয়নি। এ ব্যাপারে অদিতিদেবীর বক্তব্য, ‘‘আয়ুর্বেদ দিবস পালনের একটা অংশ হল এই পুজো। এতে টাকা দেওয়া নিয়ে অযথা সংবাদমাধ্যমের প্রচারের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।’’ একাধিক আয়ুর্বেদ চিকিৎসকই আবার জানিয়েছেন, খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন ধন্বন্তরীর মূর্তিতে আরতি করে নতুন চিকিৎসাকেন্দ্রের ঘোষণা করছেন, তখন সরকারি হাসপাতালে ধুমধাম করে পুজোয় অসুবিধা কোথায়?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement