লগ্নি টানতেই সস্তায় জমি পার্কে: মমতা

পসরা সাজিয়ে বসে থাকলেও দোকানে যে খরিদ্দার আসছে না, বণিকসভার প্রতিনিধিরা এত দিন সেটা বলছিলেন ঘুরিয়ে। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, রাজ্যের ভ্রান্ত জমি-নীতির জন্যই বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে না কোনও বড় সংস্থা। শুক্রবার বিধানসভায় সেই অভিযোগই কার্যত মেনে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, লগ্নি টানতেই তাঁর সরকার মালদহের ফুড পার্কে জমির দাম কমিয়ে দিয়েছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর নিয়ে একটি অতিরিক্ত প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী এ কথা জানান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০৩:১৫
Share:

পসরা সাজিয়ে বসে থাকলেও দোকানে যে খরিদ্দার আসছে না, বণিকসভার প্রতিনিধিরা এত দিন সেটা বলছিলেন ঘুরিয়ে। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, রাজ্যের ভ্রান্ত জমি-নীতির জন্যই বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে না কোনও বড় সংস্থা। শুক্রবার বিধানসভায় সেই অভিযোগই কার্যত মেনে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, লগ্নি টানতেই তাঁর সরকার মালদহের ফুড পার্কে জমির দাম কমিয়ে দিয়েছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর নিয়ে একটি অতিরিক্ত প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী এ কথা জানান।

Advertisement

শিল্পের জন্য কোনও জমি অধিগ্রহণ করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে মমতার সরকার। তাদের পরামর্শ, শিল্প গড়তে হলে জমি কিনে নিন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু জমি কেনার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার কোনও রকম মধ্যস্থতা করবে না। আবার শিল্পের স্বার্থে জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন তুলে দিতেও রাজি নন নবান্নের কর্তারা। বিনিয়োগ টানতে চার বছর আগে ‘জমি ব্যাঙ্ক’ তৈরির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু সেখানে যে বড় শিল্পের জন্য এক লপ্তে বেশি জমি মিলবে না, সে-কথা বলছেন প্রশাসনের কর্তারাই।

সরকারের এই মনোভাবের জন্য বিভিন্ন নিগমের হাতে যে-সব শিল্প পার্ক রয়েছে, তার জমি কিনতেও লগ্নিকারীরা কোনও রকম আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সরকারি হিসেবে এই মুহূর্তে নিগমের হাতে থাকা ২২টি শিল্প পার্কে ফাঁকা জমি রয়েছে প্রায় ৩০০০ হাজার একর। নবান্নের কর্তারাই জানাচ্ছেন, নিগমগুলির ফাঁকা জমি কেনার জন্য গত কয়েক বছরে একাধিক বার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে সাড়া মিলেছে সামান্যই। মালদহের ফুড পার্কের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ শিল্প উন্নয়ন নিগমের এক কর্তা জানান, মালদহের ফুড পার্কে শিল্প গড়ার জন্য আগ্রহীদের আবেদনপত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, প্রতি একর জমির দাম পড়বে দেড় কোটি টাকা। কিন্তু তাতে কোনও সাড়া মেলেনি। বাধ্য হয়ে জমি দাম দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে নতুন করে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিগম। ঠিক হয়েছে, নতুন বিজ্ঞাপনে জমির দাম চাওয়া হবে একর-প্রতি ৪৫ লক্ষ টাকা। এ দিন বিধানসভায় সে-কথাই জানান মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আরও জানান, বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে এক-জানলা নীতি ‘সিনার্জি’ তৈরি করেছে তাঁর সরকার। এই ব্যবস্থায় সরকারের শিল্প-ভূমি-পরিবেশ দফতর এবং লগ্নিকারীদের যুক্ত করা হয়েছে। তাঁর দাবি, রাজ্যের তাঁত ও হোসিয়ারি শিল্পের উন্নয়নের জন্য যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন জেলায় একাধিক প্রকল্পে মোট ২৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। কর্মসংস্থান হবে প্রায় ছ’লক্ষ। তাঁর আরও দাবি, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগের পাঁচ বছরে ১৬
হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা খরচ করে রাজ্যে ৪৯টি মাঝারি ও ছোট শিল্প কেন্দ্র গড়া হয়েছিল। আর তাঁরা ক্ষমতার আসার পরে গত চার বছরে ৫৫ হাজার কোটি ৭৪০ কোটি টাকা খরচ করে গড়া হয়েছে ১৮০টি কেন্দ্র। তাতে সাড়ে চার লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি শুনে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র প্রশ্ন তোলেন, এখন যেখানে নবান্ন, সেই বাড়িটি বস্ত্র শিল্প এবং হাওড়া হাটের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। যাঁদের জন্য এটা করা, তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য কী বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে?

জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘নবান্নের ওই বাড়িতে ছোট ছোট ঘর করা হয়েছিল। সেখানে ওঁরা যেতে চাননি। আমি হাওড়ার মেয়রকে জমি দেখতে বলেছি। যাঁরা সেখানে যাবেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেই ব্যবস্থা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement