সংযুক্তিকরণের যুক্তি দেখিয়ে রাজ্যের সাত পুরসভায় ভোট না করা বেআইনি বলে রায় দিল হাইকোর্ট। আগামী দু’মাসের মধ্যে ওই সব পুরসভায় ভোট করানোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ। পুরনিগমের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে, এই যুক্তিতে বোর্ডের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও রাজারহাট-গোপালপুর, বিধাননগর, বালি, আসানসোল, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ ও কুলটি পুরসভায় ভোট করায়নি রাজ্য সরকার। সেখানে প্রশাসক বসিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। এই ভোট না হওয়া নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল হাইকোর্টে। বৃহস্পতিবার সেই মামলার রায় দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী নয়ন বিহানি জানান, ডিভিশন বেঞ্চ তার রায়ে জানিয়েছে, সংযুক্তিকরণের যুক্তিতে ওই সাত পুরসভার ভোট না করা বেআইনি। তাঁর কথায়, ‘‘আদালত জানিয়েছে, ওই সাতটি পুরসভার মেয়াদ অনেক দিন উত্তীর্ণ হয়েছে। তাই দু’মাসের মধ্যে সেগুলির ভোট করতে হবে।’’ রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশের কথা শুনেছি। বিশদ কিছু জানি না। তা খতিয়ে দেখে ওই সাতটি পুরসভায় ভোট করানোর বিষয়ে বলতে পারব।’’
আগামী ১৮ এপ্রিল কলকাতা ও ২৫ এপ্রিল রাজ্যের আরও ৯১টি পুরসভায় ভোট হচ্ছে। হাইকোর্ট আরও সাত পুরসভায় ভোটগ্রহণের নির্দেশ দেওয়ার পরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ এখনও হাতে পাইনি। তা পেলেই ওই সাত পুরসভার ভোটের প্রস্তুতি শুরু করব।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘কোথায় কী সংযুক্ত হল, কী হল না তা আমার দেখার কথা নয়। আদালতের নির্দেশ মেনে ভোটের কাজ শুরু করব।’’
একগুচ্ছ পুরভোটকে সামনে রেখে কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা এলাকায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছে সিপিএম। হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েও দলের নেতা রবীন দেবের আশঙ্কা, ‘‘তৃণমূলের সরকার বারবার আদালতের নির্দেশ অমান্য করছে। এ ক্ষেত্রেও মানবে কি না জানি না।’’ তবে নাগরিকদের অনেকে এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। বিধানননগরে বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধুর মতে, ‘‘সংযুক্তিকরণের প্রশ্নে পুর এলাকার বাসিন্দাদের মতামত নেওয়া জরুরি।’’
আসানসোল ও কুলটি পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরিয়েছে গত বছর। কিন্তু রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, কুলটি ও আসানসোলকে নিয়ে একটি পুর নিগম তৈরির কথা জানিয়ে ভোট করেনি রাজ্য। বিরোধীদের অভিযোগ, গত লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে আসানসোল ও কুলটিতে বিজেপির তুলনায় তৃণমূল অনেকটাই পিছিয়ে পড়ায় ভোট পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিজেপি-র আসানসোল জেলা সম্পাদক প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘হাইকোর্টের রায়ে এ বার ভোট হবে। তবে দেখতে হবে, ভোট যেন ঠিক মতো হয়।’’ আসানসোল পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য তথা
প্রাক্তন মেয়র তৃণমূলের তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার তার পদক্ষেপ ঠিক করবে। কিন্তু আমরা ভোটের জন্য তৈরি।’’
বালি বিধানসভা আসন আগেই তৃণমূলের হাতে চলে গেলেও পুরসভা এখনও সিপিএমের দখলেই রয়েছে। বালির পুরপ্রধান অরুণাভ লাহিড়ীর মতে, ‘‘এখানে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, তাতে বেলুড় ও লিলুয়ার দিকে ক’টা আসন তৃণমূল পাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এই অবস্থায় ওরা পুরভোটে যেতে চাইছে না।’’ রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের হাওড়া জেলা সভাপতি (শহর) অরূপ রায় অবশ্য দাবি করেন, ‘‘বালিতে এখন পুরভোট হলে সব আসনেই আমরা জিতব। মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়ন চান বলেই বালিকে হাওড়া পুর নিগমের সঙ্গে মিলিয়ে ভোট করার পরিকল্পনা হয়েছে।’’
ফিরহাদ জানান, বিধাননগর পুরসভাকে পুর নিগমে উন্নীত করে ভোট হবে, না কি সংযুক্তিকরণের আগেই ভোট হবে তা এখনই বলা যাবে না। রাজারহাট-গোপালপুরের বিধায়ক তথা বিধাননগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত অবশ্য দাবি করেন, ‘‘হাইকোর্ট দু’মাসের মধ্যে ভোটের কথা বলেছে। কিন্তু সংযুক্তিকরণের আগে না পরে ভোট হবে, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট কিছু এই রায়ে বলা নেই। তাই রাজ্যের সিদ্ধান্তই এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত।’’