প্রতীকী ছবি।
মুখে ‘মার মার’ রব। কিন্তু মারবেন কী দিয়ে। হাতের কাছে লাঠি-বৈঠাটুকুও তো নেই! এ দিকে, সঙ্গীর ঘাড়ে থাবা বসিয়ে তত ক্ষণে দক্ষিণরায় টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে জঙ্গলের দিকে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন বছর পঁয়ষট্টির যাদব মণ্ডল। এক হাঁটু কাদায় দাঁড়িয়ে সঙ্গীরা শুধু চিৎকার করেই বাঘ তাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছেন। এক সময়ে চাপ চাপ কাদা তুলে দু’হাতে ছুড়ে মারতে থাকেন বাঘের চোখ-মুখ লক্ষ্য করে। ছ’জনের বারো হাতে ছোড়া কাদার ছিটেয় অস্বস্তিতে পড়ে যায় বাঘ। এক সময়ে শিকারকে মুখ থেকে নামিয়ে ঢুকে পড়ে জঙ্গলের গভীরে। এ ভাবেই যাদবকে ফিরিয়ে এনেছেন বলে জানালেন তাঁর সঙ্গীরা। তাঁদেরই এক জন সুবোধ মণ্ডল বলেন, “লাঠিসোঁটা ছিল না। কাদা ছেটাতে শুরু করি। বাঘটার চোখে-কানে সম্ভবত ঢুকে যায় ওই কাদা। তাতেই হকচকিয়ে যায়।’’
গোসাবার পাখিরালয় গ্রাম থেকে সাত জনের মৎস্যজীবীদের দলটি বুধবার সরকারি অনুমতিপত্র নিয়েই জঙ্গলে ঢুকেছিল মাছ-কাঁকড়া ধরতে। শুক্রবার সন্ধ্যায় পঞ্চমুখানি খালে জাল পাতেন তাঁরা। শনিবার সকাল তখন ৭টা। খাঁড়িতে নেমে জালের মাছ তোলার চেষ্টা করছিলেন সকলে। সে সময়েই হানা দেয় বাঘ।
যাদবের সঙ্গী সুবোধ, দ্বিজপদ মণ্ডলরা পাড় থেকে কাদা তুলে বাঘের চোখে-মুখে ছুড়তে থাকেন। বাঘ ‘শিকার’ ছেড়ে দিলে জল-কাদা-রক্তে মাখামাখি যাদবকে নিয়ে নৌকোয় তুলে বন দফতরের সজনেখালি রেঞ্জ অফিসে যান সঙ্গীরা। পরে গোসাবা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর অনিন্দ্য গুহ ঠাকুরতা বলেন, “এমন একটা ঘটনার কথা শুনেছি। ওই মৎস্যজীবীদের কাছে সরকারি কাগজপত্র ছিল বলেই জেনেছি। তদন্ত শুরু হয়েছে।’’