মিছিল মোর্চা সমর্থকদের।— ফাইল চিত্র।
একে তো চাপে পড়ে জিএনএলএফ আর জন আন্দোলন পার্টির সঙ্গে আন্দোলনের মঞ্চ ভাগ করতে হচ্ছে। তার উপরে অনির্দিষ্টকালের বন্ধ চালিয়ে গেলেও দিল্লির দিক থেকে কোনও ইতিবাচক ইঙ্গিত এখনও নেই। ক্রমেই খালি হচ্ছে পাহাড়ের ভাঁড়ার। এই অবস্থায় মরিয়া মোর্চার হুঁশিয়ারি, প্রয়োজনে তারা আমরণ অনশন বা আত্মঘাতী আন্দোলনে নামবে এ বার।
মোর্চা সূত্রে খবর, এই চাপ আসলে বাড়াচ্ছে দলের তরুণ প্রজন্ম। এ দিন তাদের চাপেই যুব সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রকাশ গুরুঙ্গ দলীয় দফতরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমাদের আলাদা রাজ্যের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন তীব্র করা হবে। সে জন্য আমরণ অনশনের কথা ভাবা হয়েছে। প্রয়োজনে আমাদের সদস্যরা গায়ে আগুন দিয়ে জীবন বিসর্জন দিতেও তৈরি হচ্ছে।’’
পুলিশ-প্রশাসনের একটি অংশের আশঙ্কা, এই মরিয়া ভাব বজায় থাকলে গুন্ডামি বে়ড়ে যেতে পারে। এ দিনই খাস সম্প্রদায়ের প্রধান রাজেন্দ্র বেটোয়ালের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ, এর পিছনে রয়েছে মোর্চার সদস্যরাই। কালিম্পঙের আলগারায় রাজেন্দ্রর বাড়ি। প্রশাসনের একটি অংশ বলছে, এই প্রথম কোনও সম্প্রদায়ের প্রধানের বাড়িতে আগুন দেওয়া হল। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, মোর্চার মধ্যে মরিয়া ভাব বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে মিরিকে তৃণমূলের কাউন্সিলাররা বিপদের মুখে। পাহাড়ের প্রথম সারির তৃণমূল নেতারাও আক্রান্ত হতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে পাহারা বাড়ানোও হয়েছে।
গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা ২০১৩ সালেও দেখা গিয়েছিল। পুলিশের এক কর্তা এ কথা জানিয়ে বলেন, তবে এই ঘটনা বেশি ছড়ায়নি। এর পরে আলোচনার মাধ্যমে আন্দোলনের তীব্রতা স্তিমিত হয়েছিল। এ বারও ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, পাহাড়ের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে পাহাড়ে সদ্য নিযুক্ত
পুলিশকর্তাদের পক্ষ থেকে একটি রিপোর্ট নবান্নে পৌঁছেছে। সেখানে মোর্চা-সহ পাহাড়ের দলগুলির সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরির প্রসঙ্গ রয়েছে।
মোর্চার খবর, দিল্লিতে তেমন সাড়া না মেলায় তাঁদের একাংশও পাহাড়ের সব দলকে সামনে রেখে আলোচনার বাতাবরণ তৈরির কথা ভাবছেন। সব ঠিক থাকলে ২৯ জুন মোর্চার ডাকা সর্বদল বৈঠক থেকে ক’দিনের জন্য বন্ধ শিথিল করে আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে বলে আশা করছেন পাহাড়ের রাজনীতি সম্পর্কে অভিজ্ঞদের অনেকেই।
কারণ, সমতলেও যে চাপ বাড়ছে। মোর্চার এক নেতা একান্তে জানান, রবিবার শিলিগুড়িতে বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে যে স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল হয়েছে, তাতে বিমল গুরুঙ্গদের উপরে চাপ আরও বেড়ছে। তাঁরা বুঝতে পারছেন, এখনকার পরিস্থিতি অতীতের থেকে আলাদা। শিলিগুড়িতে আবার ৩০ তারিখ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় ২৯শে পাহাড় থেকে বন্ধ শিথিলের বার্তা দিলে উত্তেজনা কমতে পারে।
আর আলোচনা? মোর্চা এখনও বলছে, গোর্খাল্যান্ড ছাড়া আর কোনও বিষয়ে তারা কথা বলবে না। গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে পথে নেমে পড়েছে জিএনএলএফ, জন আন্দোলন পার্টির মতো পাহাড়ের অন্য দলগুলিও। উল্টো দিকে, রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘আমরা বরাবরই বলছি, অশান্তির রাস্তা ছাড়তে হবে। তার পরে আলোচনায় বসে সমস্যা মেটাতে হবে। পাহাড়-সমতলের মধ্যে কোনও বিভেদ আমরা চাই না। কোনও মূল্যে তা হতেও দেব না।’’