সেই ‘ট্র্যাডিশন’ চলছেই, ফের বন্‌ধ পাহাড়ে

আর এর দিক থেকেও ৩১ বছর আগের ঘটনা পরম্পরার সঙ্গে অনেক মিল দেখতে পাচ্ছেন পাহাড়বাসীরা। সে যাত্রায় ঘিসিঙ্গদের আন্দোলনের মোকাবিলায় আর কে হান্ডা-সহ কয়েক জন আইপিএস-কে পাহাড়ে পাঠানো হয়েছিল।

Advertisement

কিশোর সাহা

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৭ ০৪:১৩
Share:

শহরে: দার্জিলিং থেকে কলকাতায় ফিরলেন মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। নিজস্ব চিত্র

১৯৮৬ থেকে ২০১৭— তিন দশকেও বদলাল না দাবি আদায়ে পাহাড় অচলের ‘ট্র্যাডিশন’।

Advertisement

শুক্রবারের বন্‌ধের জন্য শনিবার দুপুরে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন বিমল গুরুঙ্গ। তখনও মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়িতে। বিকেলে তিনি কলকাতা ফেরার বিমান ধরতেই সুর পাল্টে গেল মোর্চা প্রধানের। ঘোষণা করলেন, সোমবার থেকে পাহাড়ে ‘অনির্দিষ্টকালের বন্‌ধ’। তবে শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানে। হোটেল, দোকানপাট, বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান এবং গাড়িঘোড়া, সবই চালু থাকবে। অতীতে সুবাস ঘিসিঙ্গও মহাকরণের সঙ্গে সকালে বার্তা চালাচালির পরে সুর নরম করতেন কিন্তু পরে তার থেকে সরে লাগাতার বন্‌ধ ডাকতেন।

আরও পড়ুন:আরও বাহিনীর প্রস্তাব কেন্দ্রের

Advertisement

আর এর দিক থেকেও ৩১ বছর আগের ঘটনা পরম্পরার সঙ্গে অনেক মিল দেখতে পাচ্ছেন পাহাড়বাসীরা। সে যাত্রায় ঘিসিঙ্গদের আন্দোলনের মোকাবিলায় আর কে হান্ডা-সহ কয়েক জন আইপিএস-কে পাহাড়ে পাঠানো হয়েছিল। এ বারও পাহাড়ে ৩ জন আইপিএস-কে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বারও সরানো হয়েছে এসপি এবং দুই ইন্সপেক্টরকে।

তবে একটা বড় ব্যতিক্রমও খুঁজে পাচ্ছেন পাহাড়বাসী। তা হল, শান্তি বজায় রাখতে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় চষে ফেলা। এর মধ্যেই প্রশ্ন ওঠে, গুরুঙ্গকে কি গ্রেফতারের কথা ভাবছে রাজ্য? জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা নিয়ে আমি কিছু বলব না। এটা ডিজি-স্বরাষ্ট্রসচিবরা দেখছেন।’’ একই সঙ্গে বন্‌ধ নিয়ে অনমনীয় মনোভাব রেখে তিনি বলেন, ‘‘আমিও আইনের ঊর্ধ্বে নই। প্রশাসনিক পদে থাকলেও বেআইনি কাজ করলে আমিও পার পাব না।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘কেউ যেন মনে না করেন, ক্ষমতায় আছি বলেই যা খুশি করব, জনজীবন স্তব্ধ করব।’’

খোলা-বন্ধ

• সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকাল বন্‌ধের ডাক দিয়েছে মোর্চা।

• রাজ্য, কেন্দ্র সরকারি অফিস, জিটিএ, ব্যাঙ্ক বন্‌ধের আওতায়।

• তবে সোম ও বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্ককে ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

• ২৬-২৯ জুন ব্যাঙ্কের সঙ্গে ছাড় সরকারি দফতরকেও।

• পুরোপুরি ছাড় স্কুল-কলেজ, দোকান, পরিবহণ ও হোটেলগুলিকে।

বাম জমানার সঙ্গে মনোভাবের এই ফারাক নজরে রয়েছে গুরুঙ্গদেরও। মোর্চার অন্দরের খবর, তাই দলের কট্টরপন্থীদের চাপে লাগাতার বন্‌ধ ডাকলেও পাহাড়ের জনজীবন পুরো স্তব্ধ করার ফতোয়া দেয়নি মোর্চা। তবে দলের এক সূত্রের মতে, পাহাড়ে মমতার ঘনঘন ঘোরাঘুরির জেরে মোর্চায় ভাঙন বেড়েই চলেছে। এ দিনের বৈঠকে এই প্রসঙ্গে উদ্বেগ জানিয়ে কট্টরপন্থীদের অনেকে জানান, এর ফলে পাহাড়ে হোটেল, রেস্তোরাঁ, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের একাংশ আগের মতো আর এক কথায় চাঁদা দিতে চাইছেন না। পুলিশ-প্রশাসনের উপরে চাপ না বাড়ালে জিএলপি-কে আগের মতো আর সমীহ করবেন না ব্যবসায়ী-বাসিন্দারা। মোর্চা সূত্র বলছে, কট্টরদের একাংশ প্রাক্তন এক সেনা অফিসার ও আধা সামরিক বাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত জওয়ানকে সামনে রেখে ফের প্রতিরোধের নানা প্রশিক্ষণের উপরে জোর দেয়।

সব শুনে সকলকে আপাতত মেপে পা ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন গুরুঙ্গ। এমন পরিস্থিতিতে আগে ঘিসিঙ্গের সঙ্গ ছেড়ে ছত্রে সুব্বা সশস্ত্র আন্দোলনের পথে হেঁটেছিলেন। হামলা হয়েছিল ঘিসিঙ্গের উপরেও।

মোর্চার এক প্রবীণ নেতা জানান, এখন যাতে সেই পরিস্থিতি না হয়, সে জন্য দুপুরে ক্ষমা চেয়েও বিকেলে বন্‌ধের ডাকে সায় দিতে বাধ্য হয়েছেন গুরুঙ্গ। উপরন্তু, চিন্তা দলের যুবদের নিয়েও। তারা যাতে সশস্ত্র পথে না হাঁটে, সেটাও ভাবতে হচ্ছে গুরুঙ্গকে।

সাধারণ পাহাড়বাসীদের অনেকে, হকার থেকে তারকা হোটেল, নামী রেস্তোরাঁর মালিকদের কয়েক জনও একান্তে জানাচ্ছেন, এ হল একযোগে ‘মুখ ও পিঠ বাঁচানোর’ বন্‌ধ। তাঁদের যুক্তি, কট্টরদের দাবি মেনে আন্দোলন চালানোয় দলের মুখরক্ষা যেমন হল, তেমনই পর্যটন মরসুমে জনজীবন স্তব্ধ না করে আন্দোলনও চালানো গেল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement