‘ঠাকুর তা হলে হাতটা দিলেন!’, খুশি পৌলোমী

আপাতত ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ওই হাত দিয়ে পৌলোমী দৈনন্দিন কাজ করতে পারবে বলে জানিয়েছেন নার্সিংহোমের চিকিৎসক রাহুল ডোকানিয়া। কী ভাবে নকল হাত ব্যবহার করতে হবে, এ দিন পৌলোমীকে তা-ও হাতেকলমে শেখানো হয়। চিকিৎসক বলেন, ‘‘নকল হলেও উন্নত প্রযুক্তিতে গড়া হাতটি ব্যাটারির সাহায্যে প্রায় আসলের মতো কাজ করবে। স্নান এবং ঘুমোনোর সময় খুলে রাখতে হবে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বসিরহাট ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৮ ০৪:১০
Share:

ঝলমলে: নতুন হাত পেয়ে খুশি পৌলোমী। বুধবার বিধানসভায় এসেছিল সে। —নিজস্ব চিত্র।

চিকিৎসক নকল হাত লাগিয়ে দিতেই ছোট্ট পৌলোমী বলে উঠল, ‘‘ঠাকুর তা হলে হাতটা দিলেন!’’

Advertisement

বুধবার কলকাতার তারাতলার একটি নার্সিং‌হোমে নকল হাত লাগানো হল সাত বছরের পৌলোমীর। গত ২০ এপ্রিল, পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে গোলমাল যখন তুঙ্গে, সেই সময় ফুল তুলতে গিয়ে খেলার জিনিস মনে করে একটি বোমা কুড়িয়ে এনেছিল সে। সেই বোমা ফেটেই বাঁ হাত উড়ে যায় হাড়োয়ার গোপালপুর দক্ষিণ হালদারপাড়ার মেয়েটির। এক মাসের উপর চিকিৎসার পর জখম হাতটি বাদ যায়। একটু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর পৌলোমী তার মা-কে বলেছিল, ‘‘ঠাকুরকে বলো না মা, আমার হাতটা ফিরিয়ে দিতে।’’

এ দিন নকল হাত লাগানোর পরেই তাতে জোর দেখতে পৌলোমী চেপে ধরে পাশে থাকা বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাসের হাত। বিধায়ক জানান, জোর আছে বুঝেই স্বস্তি পায় পৌলোমী। তার পরেই বলে ওঠে, ‘‘এ বার থেকে আমি পুতুলকে জামা পরাব, ছবি আঁকার খাতা ধরতে পারব। কী মজা, তাই না!’’

Advertisement

আরও পড়ুন: আইনের ফাঁসে দশ দিনের শিশু হাসপাতালেই

আপাতত ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ওই হাত দিয়ে পৌলোমী দৈনন্দিন কাজ করতে পারবে বলে জানিয়েছেন নার্সিংহোমের চিকিৎসক রাহুল ডোকানিয়া। কী ভাবে নকল হাত ব্যবহার করতে হবে, এ দিন পৌলোমীকে তা-ও হাতেকলমে শেখানো হয়। চিকিৎসক বলেন, ‘‘নকল হলেও উন্নত প্রযুক্তিতে গড়া হাতটি ব্যাটারির সাহায্যে প্রায় আসলের মতো কাজ করবে। স্নান এবং ঘুমোনোর সময় খুলে রাখতে হবে।’’

পৌলোমীর বাবা শম্ভু হালদার অসুস্থ। সেলাই করে সংসার চালান মা দীপালিদেবী। এত দিন মেয়ের দুর্দশায় চোখের জল ফেলতেন তাঁরা। পৌলোমীর ওই দুর্ঘটনার কথা সংবাদমাধ্যমে জানার পরে রাজ্যের মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায় পৌলোমীর বাড়িতে যান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক দীপেন্দু তিন লক্ষেরও বেশি টাকা জোগাড় করে পৌলোমীর জন্য বিদেশ থেকে নকল হাত আনানোর ব্যবস্থা করেন। এ দিন হাড়োয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি খালেক মোল্লা এবং জেলা পরিষদের সদস্য সঞ্জু বিশ্বাস মা-মেয়েকে নার্সিংহোমে আনেন। নকল হাত লাগানোর পর বুধবার বিধানসভাতেও আনা হয় পৌলোমীকে।

আরও পড়ুন: স্থায়ী প্রধান শিক্ষক নেই ১৪০০ স্কুলে

মেয়ের হাত হওয়ায় খুশি দীপালিদেবী। সকলের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সঙ্গে দুর্ভাবনাও, ‘‘মেয়ে বড় হলে ফের হাত কিনব কী ভাবে!’’

মেয়ে অবশ্য সে সব নিয়ে ভাবেনি। অনেক দিন পরে তার মুখ ঝলমল করেছে। হাসতে হাসতে নতুন হাত বারবার মাকে দেখাচ্ছিল পৌলোমী, ‘‘দেখেছ তো মা, ঠাকুর কেমন আমার কথা শুনে হাতটা পাঠিয়ে দিল!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement