‘ঠিক করি বাঁ হাতেই আঁকব’

যখন তাঁর জ্ঞান এসেছিল, তখন কোমরের নীচের অংশ ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে। পায়ের তলায় অনেক মানুষ চাপা পড়ে ছটফট করছেন। এক আর্মি অফিসারকে দেখে নিজেই চেঁচিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমি বাঁচতে পারব, আমাকে বের করুন।’’

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৪
Share:

শ্রেয়া সেন

যখন তাঁর জ্ঞান এসেছিল, তখন কোমরের নীচের অংশ ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে। পায়ের তলায় অনেক মানুষ চাপা পড়ে ছটফট করছেন। এক আর্মি অফিসারকে দেখে নিজেই চেঁচিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমি বাঁচতে পারব, আমাকে বের করুন।’’

Advertisement

আট বছর আগে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় ডান হাত হারিয়েছিলেন শ্রেয়া সেন। স্বাভাবিক ভাবনায় সেখানেই এক সম্ভাবনাময় স্থপতির পেশাদার জীবনের স্বপ্নে ইতি হওয়ার কথা। কিন্তু এই বাঙালিনি বাঁ হাতেই জীবন ঘুরিয়ে দিয়েছেন। এক নতুন রূপকথার খসড়া তৈরির সময়ে সেই হাত একটুও কেঁপে যায়নি তাঁর।

স্থাপত্যবিদ্যার চতুর্থ বর্ষে মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টপার’ ছিলেন শ্রেয়া। তার পরেই জ্ঞানেশ্বরীর ঘটনা। বাঁ হাতে এবং কিছুটা পায়ের সাহায্য নিয়ে পঞ্চম তথা চূড়ান্ত বর্ষের থিসিস পেপার এঁকে শ্রেয়া প্রথম শ্রেণিতে ‘ডিস্টিংশন’ নিয়ে পাশ করেন। ফোনে বললেন, ‘‘সফটওয়্যারের সাহায্য নেওয়ার সুযোগ থাকলেও আমি সেটা নিইনি। বাঁ হাতে এঁকেই আমি সাফল্য পেয়েছি।’’ স্নাতকোত্তর স্তরে আইআইটি রুরকিতে প্রথম সেমেস্টারেই প্রথম হয়ে জার্মানিতে থিসিস করার সুযোগ পেয়েছেন শ্রেয়া। এখন তিনি নিজেই স্থাপত্যবিদ্যার অধ্যাপিকা। বিয়ে করেছেন গত ফেব্রুয়ারিতে। এখন শ্রেয়া বাড়ি-ঘর গড়ার পাশাপাশি জীবনের বাধা পেরনোর কৌশলও শেখান।

Advertisement

সম্প্রতি আইআইটি, মাদ্রাজের ‘ডিপার্টমেন্ট অব ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইনে’ ডক্টরেট করার জন্য পেপার জমা দিয়েছেন তিনি। ভারতীয় তথা এশীয়দের শারীরিক ধরন অনুযায়ী হালকা নকল হাত তৈরির জন্য গবেষণা করতে চান। কেন? শ্রেয়ার কথা, ‘‘বন্ধুবান্ধবেরা গোটা পৃথিবী থেকে অর্থ সংগ্রহ করে যে দামি রোবোটিক হাত আনিয়েছিলেন, তা পরতেই পারিনি আমি। কারণ ওই হাত মূলত আমেরিকা-ইউরোপের শারীরিক গঠনের কথা ভেবে তৈরি। আমি এই ফাঁকটা পূরণ করতে চাই।’’

টেলিফোনে শ্রেয়া জানাচ্ছিলেন, ‘‘আমি বুঝেছিলাম হাত বাদ দিতে হবে। জানতাম বেঁচে থাকলে ঠিক লড়ে নেব।’’ অস্ত্রোপচারের দ্বিতীয় দিন থেকে হাসপাতালেই বাঁ হাতে লেখার অভ্যাস শুরু করেন। গলা খুলে গানও গাইতেন। তাতে মনের শক্তি বাড়ত। শ্রেয়ার কাছে প্রতিবন্ধকতা একটা মানসিক ব্যাপার। ‘‘কারও মন যদি দুর্বল হয় তা হলে একটা হাঁচি হওয়ার পরেও মনে হবে খুব শরীর খারাপ। ডান হাত বাদ যাওয়ার পরও নিজেকে প্রতিবন্ধী ভাবিনি। তাই অবসাদেও ভুগিনি।’’ টেলিফোনের ও পারে ঝলমলিয়ে ওঠে সাহসিনির হাসি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement