সুস্মিতা রায়
বিমানসেবিকা হওয়ার জন্য এ শহরে প্রশিক্ষণ নিতে এসে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন বছর কুড়ির এক তরুণী। পুলিশ জানায়, আদতে ঘাটশিলার বাসিন্দা ওই তরুণীর নাম সুস্মিতা রায়। কালীঘাট থানা এলাকার ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রিটের একটি বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকতেন তিনি। গত ১০ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ সুস্মিতা বাড়ি যাবেন বলে সেখান থেকে বেরিয়েছিলেন। তার পরে আর ফেরেননি। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই তরুণীর খোঁজে নেমেছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সুস্মিতাকে খুঁজে বার করতে ঘাটশিলার কয়েক জন যুবক এবং ওই তরুণীর রুমমেটদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি যে বাড়িতে থাকতেন, সেটির মালিক ও মালকিনের সঙ্গেও কথা বলেছে পুলিশ।
সুস্মিতার পরিবারের অভিযোগ ঘাটশিলার এক যুবকের বিরুদ্ধে, যাঁর সঙ্গে তাঁর ফেসবুক সূত্রে আলাপ। পদার্থবিদ্যার ছাত্রী ওই তরুণী গত মাসেই কলকাতার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিমানসেবিকার প্রশিক্ষণ নিতে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর পরিবারের দাবি, পুলিশ জানিয়েছে, সুস্মিতার ফোনের কললিস্ট ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, রবিবার রাত থেকে তিনি নিখোঁজ হলেও তাঁর মোবাইল পরের দিন দুপুর পর্যন্ত চালু ছিল। শেষ টাওয়ার লোকেশন মিলেছে ধর্মতলা এলাকায়।
পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে সুস্মিতার পরিবার ঘাটশিলার যে যুবকের নাম জানিয়েছে, তাঁর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হওয়ার পর থেকেই নাকি সুস্মিতার সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু ও প্রেমিকের সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। এর পরে ফেসবুকের সেই বন্ধুর সঙ্গেও বিবাদ বাধে সুস্মিতার। যার জেরে ওই যুবক তাঁকে মাঝেমধ্যেই উত্ত্যক্ত করতেন বলে অভিযোগ সুস্মিতার পরিবারের। পুলিশ জানিয়েছে, সুস্মিতার রুমমেট এক তরুণীর দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছে তাঁর পরিবার।
গত ১০ তারিখ কোথায় গিয়েছিলেন সুস্মিতা?
যে বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসেবে তিনি থাকতেন, তার মালিক মঙ্গলবার জানান, রবিবার রাতে মেয়েরা সবাই ফিরে এসেছেন দেখার পরেই সওয়া ন’টা নাগাদ তিনি নিজে সদর দরজায় তালা দিয়েছিলেন। সুস্মিতা যে তার একটু পরেই তালা খুলে বাড়ি যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে গিয়েছেন, তা তিনি সেই রাতে জানতেও পারেননি। পরের দিন সুস্মিতার পরিবার ফোন করায় তিনি ঘটনাটি জানতে পারেন। কিন্তু পেয়িং গেস্টদের কেউ রাতে না থাকলে মালিককে কিছু জানাতে হয় না? বাড়ির মালকিনের দাবি, জানাতে হয়। কিন্তু ওই তরুণী নাকি রুমমেটকে বলে যান যে, তিনি নিজেই ফোন করে মালকিনকে তা জানিয়ে দেবেন। সুস্মিতার রুমমেট ওই তরুণী বলেন, ‘‘আমার ফোন থেকে সুস্মিতাদি প্রায়ই ফোন করত। সে দিন আমার এবং নিজের মোবাইল থেকে বারবার কাউকে ফোন করছিল এবং কান্নাকাটি করে বলছিল, ‘মুঝে তুম গলত সমঝ রহে হো!’ এর পরেই সুস্মিতাদি বাড়ি যাবে বলে ব্যাগ গোছাতে শুরু করে। কিন্তু ফোন আসায় ব্যাগ রেখেই বেরিয়ে যায়।’’
সুস্মিতার কি বাড়ি ফেরার খুব তাড়া ছিল? রুমমেট ওই তরুণী জানান, নিখোঁজ হওয়ার কয়েক দিন আগেই সুস্মিতা ঘাটশিলা থেকে ফিরেছিলেন। পার্ক স্ট্রিটের যে প্রতিষ্ঠানে তিনি বিমানসেবিকার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন, সেখানে আর যাবেন না বলেও জানিয়ে এসেছিলেন। চাইছিলেন ঘাটশিলায় ফিরে যেতে। এরই মাঝে যে তিনি এ ভাবে নিখোঁজ হয়ে যাবেন, তা ভাবতেই পারছেন না ওই তরুণী।