অপূর্ব সরকার। ফাইল চিত্র
সামনের দরজা বন্ধ। স্ক্রিন উজ্জ্বল করে ফোন বেজেই চলেছে। নিঝুম ঘরে, চেয়ারে পা ছড়িয়ে বসে আছেন তিনি, বলছেন, ‘‘ভাল লাগছে না, পরে, পরে কথা হবে।’’
২৩ তারিখ সকাল-দুপুর গড়িয়ে বিকেলেও ছবিটার কোনও বদল হল না। আগের দিনও, যে মানুষটা বস্ত্যতায় ঘাম মোছারও সময় পাচ্ছিলেন না, বৃহস্পতিবার দিনভর পাথরের মতো বসে থাকলেন তিনি। অপূর্ব সরকার, আপামর মুর্শিদাবাদ যাঁকে চেনে ডেভিড।
শুভেন্দু অধিকারীর বাছাই প্রার্থী, দলনেত্রী নিজে যাঁর প্রচারে এসে বলে গিয়েছিলেন, ‘এ বার অন্তত আমাদের জেতান, বহরমপুরের কোনও খামতি থাকবে না!’ জয় সম্পর্কে সেই নিশ্চিৎ মানুষটা হেরে গেলন কেন?
ফল প্রকাশের রাতে নিঝুম দলীয় কার্য়ালয়ে বসে দলের এক তাবড় নেতা একটা ব্যাখ্যা ভাসিয়ে রাখলেন— ‘‘যার যতই পছন্দের হোক, মানুষের মনটা বুঝতে হবে তো! বহরমপুরের মানুষ এখনও অধীরদাকে খুব কাছ থেকে চেনে। তার পক্ষে সহানুভূতুটা এখনও রয়ে গেছে। যে লোকটা অধীরের সঙ্গে গত ভোটেও দাপাল সেই কি না বেইমানি করে দাদার বিরুদ্ধে!’’ এটা বহরমপুরের মানুষ মানতে পারেননি।
দলের অন্দরে প্রথম থেকেই তাই ডেভিডকে প্রার্থী করা নিয়ে একটা চাপা অস্বস্তি ছিল। কিন্তু নেত্রীর মুখের উপরে তা বলতে সাহস করেননি। দলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দুকে বলতে গেলেও ধোঁপে টেকেনি।
কান্দি, রেজিনগর, ভরতপুরের মতো বেশ কয়েকটি বিধানসভায় তাই ডেভিড নিজেই ডেভিডকে হারিয়ে দিয়েছেন বলে মনে করছেন দলের একাংশ।
তাঁদের ব্যাখ্যা— গোষ্ঠী বিবাদে এমনিতেই দীর্ণ তৃণমূল, অপূর্ব সরকারকে প্রার্থী করায় আরও ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তাদের নিয়ন্ত্রণ করার মতো ‘দাপট’ আর যাই হোক ডেভিডের ছিল না।
এমনকি স্থানীয় নেতাদের ‘লিড’ দেওয়ার উপরে যে ফতোয়া জারি হয়েছিল, অনেকেই তা ভাল মনে মেনে নেননি বলেও দাবি করেছেন এক জেলা নেতা। তাঁর কথায়, ‘‘তাঁরা অনেকেই চাপা স্বরে বলেছেন, আমরা কি গরু-ছাগল? আমাদের হুমকি দিয়ে ভাল ফল হবে না।’’