মতুয়া মহা সম্মেলনে মোদীর উপস্থিতির দিন জনতার ঢল। ফাইল চিত্র।
‘পাইয়ে দেওয়ার ছকে’ বামেদের ঝুলিতে থাকা মতুয়া ভোটের দখল নিয়েছিল তৃণমূল। এক দশক পরে তার হাতবদল হল ঠিক একই পথে। ঠাকুরবাড়ির ছোঁয়া আর নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতিতে রানাঘাট ও বনগাঁ কেন্দ্র ছিনিয়ে নিল বিজেপি।
মতুয়াদের উপর প্রভাবের কথা মাথায় রেখে ঠাকুরবাড়িতে যাতায়াত শুরু করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্পে এই অঞ্চলে পা রেখেছিল তৃণমূল। ফলও মিলেছিল ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে। সেই ভোট ধরে রাখতে ২০১১ সালে ঠাকুরবাড়ির ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরকে গাইঘাটা থেকে জিতিয়ে মন্ত্রিসভায় জায়গা দিয়েছিলেন মমতা। রানাঘাট-সহ নদিয়া ও আরও কয়েকটি জেলায়ও ছড়িয়ে থাকা মতুয়ারা তৃণমূলের কাছাকাছি এসেছিল তখন থেকেই। ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে বনগাঁ কেন্দ্রে তৃণমূল জিতেছিল ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে। আর বিজেপির ভোট ছিল তিন শতাংশ। এবার তা বদলে বিজেপি পৌঁছে গিয়েছে ‘ভিকট্রি ল্যাপে।’
জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘মতুয়াদের জন্য সরকার ও দল অনেক কিছু করেছে। কিন্তু তার বেশিরভাগ একটি পরিবারকেন্দ্রিক হয়ে যাওয়ায় বিজেপি মাটি পেয়ে গিয়েছে। পরে পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ হবে।’’
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগে একইভাবে ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে রানাঘাটের দখল পেয়েছিল তৃণমূল। সেখানেও হেরে গিয়েছে তৃণমূল। বনগাঁর মতোই রানাঘাটের ফলাফল নির্ণয়েও মতুয়া ভোট বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নাগরিকত্ব আইনের আশ্বাসে মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক ভাঙার তৎপরতা এখানেও সমানভাবে চালিয়েছে বিজেপি। পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে সেই হাওয়া টের পেয়েছিলেন তৃণমূলের নেতারাও। সেই সঙ্গে ভোটে পঞ্চায়েতের তিন স্তরেই গা জোয়ারি, লোকসভায় প্রার্থী বদল দলের হারকে ত্বরান্বিত করেছে বলে মনে করছে তৃণমূলের একাংশ। নদিয়া জেলা দলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘হারের কারণ পর্যালোচনা করব।’’
দুই কেন্দ্রেই ২০১৪ সালে বিজেপির ভোট শূন্য থেকে ১৭-১৮ শতাংশে পৌঁছেছিল। সেই হিসেব হাতে রেখেই শেষ পাঁচবছর কাজ করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত নেতারা। পাশাপাশি তৃণমূলের একাংশের সহযোগী ভূমিকাও নজরে এসেছে বিজেপি নেতৃত্বের। রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নাগরিকত্বের আশ্বাসকে মতুয়ারা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হিসাবে নিয়েছেন। তৃণমূলের প্রচার তাদের বিভ্রান্ত করতে পারেনি।’’